পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(88 রবীন্দ্র রচনাবলী এই যে এল সেই আমারি স্বপ্নে দেখা রূপ, কই দেউলে দেউটি দিলি, কই জ্বালালি ধূপ ৷ যায় যদি রে যাক-না ফিরে, চাই নে তারে রাখি, সব গেলেও হায় রে তবু স্বপ্ন রবে বাকি । এখানে ‘এই সেই “কই ‘যায়’ ‘হয়’’ প্ৰভৃতি শব্দ এক সিলেবল-এর বেশি মান দাবি করলে না । বাঙালি পাঠক সেটাকে অন্যায় না মনে করে সহজ ভাবেই নিলে । দইভাডে ছিপ ছাডে, খোজে। কইমাছ । ঘুটে ছাই মেখে লাউ বাধে ঝাউপাতা, কী খেতাব দেব তায় ঘুরে যায় মাথা । এখানে ‘মই’ ‘কই ‘তুই’ ‘দই ছাই “লাউ প্রভৃতি সকলেরই সমান দৈর্ঘ্য, যেন গ্রানেডিয়াবের সৈন্যদল ! যে পাঠক এটা পড়ে দুঃখ পান নি সেই পাঠককেই অনুবোধ কবি, তিনি পড়ে দেখুন তুলতে ቖኝ፫ሙና ہی গোলেম বনের ধারে, সন্ধা-আলোর মেঘের ঝালর ঢাকল অন্ধকাকে { কুঞ্জে গোপন গন্ধ বাজায় দোহার নয়ন খুজে বেডয দোহার মুখের হাসি । এখানে যুগুধ্বনিগুলো এক সিলেবল-এর চাকবি গাডিতে অনায়াসে ধেয়ে চলেছে । চণ্ডীদাসেব গানে রাধিকা বলেছেন, “কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো ।” বাশিধ্বনির এই তো ঠিক পথ, নিয়মের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করলে মরমে পীেছত না । কবিরাও সেই কান লক্ষ্য করে চলেন, নিয়ম যদি চৌমাথার পাহারাওয়ালার মতো সিগন্যাল তোলে। তবু তাদের রুখতে পারে না । আমার দুঃখ এই তথাচ আইনবিৎ বলছেন যে, লিপিপদ্ধতির দোষে “অক্ষর গুনে ছন্দরচনার অন্ধ অভ্যাস’ আমাদের পেয়ে বসেছে । আমার বক্তব্য এই যে, ছন্দরচনার অভ্যাসটাই অন্ধ অভ্যাস । অন্ধের কান খুব সজাগ, ধ্বনির সংকেতে সে চলতে পারে, কবিরও সেই দশা । তা যদি না হত তা হলেই পায়ে পায়ে কবিকে চোখে চশমা এটে অক্ষর গানে গ'নে চলতে হত । ‘বৎসর’ ‘উৎসব’ প্রভূতি খণ্ড ৎ-ওয়ালা কথাগুলোকে আমরা ছন্দের মাপে বাড়াই কমাই, এরকম চাতুরী সম্ভব হয় যেহেতু খণ্ড ৎ-কে কখনো আমরা চোখে দেখার সাক্ষ্যে এক অক্ষর ধরি, আবার কখনো কানে শোনার দোহাই দিয়ে তাকে আধা অক্ষর বলে চালাই— প্ৰবন্ধলেখক এই অপবাদ দিয়েছেন । অভিযোগকারীর বোঝা উচিত, এটা একেবারেই অসম্ভব, কেননা ছন্দের কাজ চোখ-ভোলানো নয়, কানকে খুশি করা- সেই কানের জিনিসে ইঞ্চি-গজের মাপ চালেই না । 'বৎসর।' প্রভৃতি শব্দ গেঞ্জি জামার মতো ; মধুপুরের স্বাস্থ্যকর হাওয়ায় দেহ এক-আধা ইঞ্চি বাড়লেও চলে, আবার শহরে এসে এক-আধা ইঞ্চি কমলেও সহজে খাপ খেয়ে যায়। কানু যদি সম্মতি না দিত। তা হলে কোনো কবির সাধ্য ছিল না ছন্দ নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারে । বৎসরে বৎসরে ইকে কালের গোমায়ুयाग्र वायू, गाग्र आयू, याग्र शाग्र लागू ।