পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(2(?O ববীন্দ্র-রচনাবলী পয়ারে ধ্বনিবিন্যাসের এই যে স্বচ্ছন্দতা, দুই মাত্রার লয়। তার একমাত্র কারণ নয় । পয়ারের পদগুলিতে তার ধ্বনিভাগের বৈচিত্র্য একটা মস্ত কথা । সাধারণা . ভাগ হচ্ছে ৩ + ৩ + ২ + ৩ + ৩, RNR নিখিল আকাশভরা আলোর মহিমা তৃণের শিশির মাঝে লভিল প্রতিমা । অন্যরকম, যথা তপনের পানে চেয়ে সাগরের ঢেউ বলে ওই পুতলিরে। এনে দে-না কেউ । রাখি যাহা তার বোঝা কাধে চেপে রহে, দিই যাহা তার ভার চরাচর বহে । ISIQK সারা দিবসের হয় যত কিছু আশা রজনীর কারাগারে হারাবে কি ভাষা । অমিত্ৰাক্ষর ছন্দে পয়ারের প্রবর্তন হয়েছে এই কারণেই । সে কোনো কোনো আদিম জীবের মতো বহুগ্রস্থিল, তাকে নষ্ট না করেও যেখানে-সেখানে ছিন্ন করা যায় । এই ছেদের বৈচিত্রা থাকাতেই প্রয়োজন হলে সে পদ্য হলেও গদ্যের অবন্ধ গতি অনেকটা অনুকরণ করতে পারে । সে গ্রামের মেয়ের মতো ; যদিও থাকে অন্তঃপুরে, তবুও হাটে-ঘাটে তার চলাফেরায় বাধা নেই । উপরের দুষ্টান্তগুলিতে ধ্বনির বোঝা হালকা । যুগ্মীবর্ণের ভার চাপানো যাক । সুরাঙ্গনা নন্দনের নিকুঞ্জপ্রাঙ্গণে মন্দারমঞ্জরি তোলে চঞ্চলকঙ্কণে । বেণীবন্ধ তরঙ্গিত কোন ছন্দ নিয়া, স্বাগবীণা গুঞ্জরিছে তাই সন্ধানিয়া । আধুনিক বাংলা ছন্দে সব চেয়ে দীর্ঘ পয়ার আঠারো অক্ষরে গাথা । তার প্রথম যতি পদের মাঝখানে আট অক্ষরের পরে, শেষ যতি দশ অক্ষরের পরে পদের শেষে । এতেও নানাপ্রকারের ভাগ চলে । তাই অমিত্ৰাক্ষরের লাইন-ডিঙোনো চালে এর ধ্বনিশ্রেণীকে নানারকমে কুচকাওয়াজ করানো ! হিমাদ্রি ধ্যানে যাহা । স্তব্ধ হয়ে ছিল রাত্রিদিন সপ্তর্ষির দৃষ্টিতলে । বাক্যহীন স্তব্ধতায় লীন, সেই নিঝরিণী:ধারা । রবিকরকেম্পর্শে উচ্ছসিতা দিগিদগন্তে প্রচারিছে । অন্তহীন আনন্দের গীতা । বাংলায় এই আর-একটি গুরুভারবহু ছন্দ । এরা সবাই মহাকাব্য বা আখ্যান বা চিন্তাগৰ্ভ বড়ো বড়ো কথার বাহন । ছোটো পয়ার আর এই বড়ো পয়ার, বাংলাকাব্যে এরা যেন ইন্দ্রের উচ্চৈঃশ্রবা আর ঐরাবত । অন্তত, এই বড়ো পয়ারকে গীতিকাব্যের কাজে খাটাতে গেলে বেমানান হয় । এর নিজের গড়নের মধ্যেই একটা সমারোহ আছে, সেইজন্যে এর প্রয়োজন সমারোহসূচক ব্যাপারে । ছোটো পয়ারকে চেচে-ছুলে হালকা কাজে লাগানো যায়, যেমন বাশের কঞ্চিকে ছিপ করা চলে । পয়ারের দেহ সংস্থানেই গুরুর সঙ্গে লঘুর যোগ আছে । তার প্রথম অংশে আট, দ্বিতীয় অংশে ছয় ; অর্থাৎ, হালের দিকে সে চওড়া কিন্তু দাড়ের দিকে সরু ; তাকে নিয়ে মাল-বওয়ানো যায়, বাচ-খেলানোও চলে । বড়ো পয়ারের দেহ সংস্থান এর উলটাে ; তার প্রথমভাগে আট, শেষভাগে দশ ; তার গীেরবটা ক্রমেই প্রশস্ত হয়ে উঠেছে। ছোটাে পয়ারের ছিবলেমির একটা পরিচয় দেওয়া যাক ।