পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G? G NR রবীন্দ্র-রচনাবলী

  • সায়াহ-অন্ধকারে এসেছি। ভগ্ন ঘাটে তা হলে ছন্দটার কোমর ভেঙে যাবে । তবুও যদি যুগ্নবৰ্ণ দেওয়াই মত হয় তা হলে তার জন্যে বিশেষভাবে জায়গা করে দিতে হবে । পয়ারের মতো উদারভাবে যেমন খুশি ভার চাপিয়ে দিলেই হল

fi | অন্ধরাতে যবে । বন্ধ হল দ্বার, ঝঞ্জাবাতে ওঠে । উচ্চ হাহাকার । মনে রাখা দরকার, এই শ্লোক অবিকৃত রেখেও এর ভাগের যদি পরিবর্তন করে পড়া যায়, দুই ভাগের বদলে প্ৰত্যেক লাইনে যদি তিন ভাগ বসানো যায়, তা হলে এটা আর-এক ছন্দ হয়ে যাবে । একে নিম্নলিখিত-রকম ভাগ করে পড়া যাক অন্ধ্যরাতে । যবে বন্ধ { হল দ্বার, ঝঙ্কাবাতে ; ওঠে উচ্চ | হাহাকার । পশুপক্ষীদের চলন সমান মাত্রার দুই বা চার পায়ের উপর } এই পা'কে কেবল যে চলতে হয় তা নয়, দেহভার বইতে হয় । পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গেই বিরাম আছে বলে বোঝা সামলিয়ে চলা সম্ভব । আজ পর্যন্ত জীবলোকে জুডিওয়ালা পায়ের পরিবর্তে চাকার উদ্ভব কোথাও হল না ; কেননা, চাকা না থেমে গড়িয়ে চলে, চলার সঙ্গে থামার সামঞ্জস্য তার ধো নেই । দুইমূলক সমমাত্রায় দুই পায়ের চাল, তিনমূলক অসমমাত্রায় চাকার চাল দুই-পা-ওয়ালা জীপ উচুনিচু পথের বাধা ডিঙিয়ে চলে যায়, পয়ারের সেই শক্তি : চাকা বাধায় ঠেকলে ধাক্কা খায়, ত্রৈমাত্রিক ছন্দেব সেই দশা । তার পথে যুগ্মম্বর যাতে বাধা হয়ে না দাড়ায় সেই চেষ্টা করতে হবে । অধীর বাতাস এল সকালে, বনেরে বৃথাই শুধু বকালে । দিনশেষে দেখি চেয়ে, ঝরা ফুলে মাটি ছেয়েলতাবে কাঙািল ক’রে ঠকালে । এ ছন্দ পয়ারজাতীয়, টেনিস-খেলোয়াডের আধা পায়জামার মতো বহরটিা নীচের দিকে ছাটা । এ ছন্দে তাই যুগ্মম্বর যেমন খুশি চলে । নবারুণচন্দনের তিলকে দিকললাট একে আজি দিল কে । বরণের পাত্ৰ হাতে উষা এল সুপ্ৰভাতে, জয়শঙ্খ বেজে ওঠে ত্ৰিলোকে । শরতে শিশিরবাতাস লেগে জল ভ'রে আসে। উদাসী মেঘে । বরষন তবু হয় না কেন, ব্যথা নিয়ে চেয়ে রয়েছে যেন । এখানে তিন মাত্রার ছন্দ গড়িয়ে চলেছে । চাকার চাল, পা-ফেলার চাল নয় ; তাই যুন্মবর্ণের স্বেচ্ছাচারিতা এর সাইবে না । চাষের সময়ে যদিও করি নি হেলা, ভুলিয়া ছিলাম ফসল-কাটার বেলা । পয়ারের মতোই চোদটা অক্ষরে পদ, কিন্তু জাত আলাদা । তিন মাত্রার চাকায় চলেছে। পদাতিকের সঙ্গে চক্রীর মেলে না !