পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(፩ (፩ 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী হাসিয়া হাসিয়া মুখ নিরখিয়া মধুর কথাটি কয় । ছায়ার সহিত ছায়া মিশাইতে পথের নিকটে রায় । কিন্তু প্ৰাকৃত-বাংলার ক্রিয়াপদ নিয়ে একটু ভাববার বিষয় আছে । মত্তরোবে বীরভদ্র ছুটিল উর্ধবশ্বাসে, ঘূর্ণিবেগে উড়ল ধুলো রক্ত সন্ধ্যাকাশে । কিংবা ছুটিল কেন মহেন্দ্রের আনন্দের ঘোর, টুটিল কেন উর্বশীর মঞ্জীরের ডোর । বৈকালে বৈশাখী এল আকাশলুণ্ঠনে, শুক্লরাতি ঢাকল মুখ মেঘাবগুণ্ঠনে । এদের সম্বন্ধে কী বলা যাবে । প্রধানত ক্রিয়াপদেরই বিশেষ রূপটাতে প্ৰাকৃত-বাংলার চেহারা ধরা পড়ে। উপরের ছড়াগুলিতে “উড়ল ছুটিল টুটিল ‘ঢাকল প্রভৃতি প্রয়োগ নিয়ে তর্কটা ছন্দের তর্ক নয়, ভাষারীতির । এইরকম ক্রিয়াপদ যদি ব্যবহার করি তবে ধরে নিতে হবে ঐ ছড়াগুলি প্রাকৃত-বাংলাতেই লেখা হচ্ছে। আমি যে প্ৰবন্ধ লিখছি। এও প্রাকৃত-বাংলার ঠাটে। যদি আমাকে কারও সঙ্গে মুখে মুখে আলোচনা করতে হত তা হলে এই লেখার সঙ্গে আমার মুখের কথার কোনো তফাত থাকত না । মাঝে মাঝে অভাসদোষে হয়তো ইংরেজি শব্দ মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেত, কিন্তু কখনোই ‘করিয়াছিল “গিয়াছে'। ধরনের ক্রিয়াপদ ভুলেও ব্যবহার করতে পারতুম না। আবার প্রাকৃত-বাংলার ক্রিয়াপদ সংস্কৃত-বাংলায় ব্যবহার করাও চলে না | প্ৰবোধচন্দ্ৰ ‘বিচিত্রায় লিখেছেন যে, বাঙালি কবির সাহস করে কবিতায় ‘করিব চলিব।’ প্ৰভৃতি প্রয়োগ না করে কেন করব। 'চলাব প্রয়োগ না করেন । যদি প্রশ্নটার অর্থ এই হয় যে, অযথাস্থানে কেন করি নে। তবে তার উত্তর দেওয়া অনাৱশ্যক। যদি বলেন, যথাস্থানেও কেন করি নে, তবে তার উত্তরে বলব, যথাস্থানে করে থাকি । যে তর্ক নিয়ে লেখা শুরু করেছিলেম সেটাতে ফিরে আসা যাক । বাংলায় হসন্তুমধ্য শব্দগুলোয় কয় মাত্রা গণনা করা হবে, তাই নিয়ে সংশয় উঠেছে । যেগুলি ক্রিয়াপদ নয়। সে সম্বন্ধে আমার বক্তব্য এ প্রবন্ধে গোড়াতেই আলোচনা করেছি। বলেছি, নিয়মের বিকল্প চলে ; কেননা, বাঙালির কান সাধারণ ব্যবহারে সেই বিকল্প মজুর করেছে। এ ক্ষেত্রে হিসাবে একটা মাত্রার কমিবেশি নিয়ে তর্ক ওঠে না । চিমনি ভেঙে গেছে দেখে গিরি রেগে খুন ; ঝি বলে, আমার দোষ নেই, ঠাকরুন । অন্তত 'চিমনিকে দুই মাত্রা করায় কবির দোষ হয় নি । আবার ঝি বলে, ঠাকরুন মোর নাই কোনো দোষ । এরকম বিপর্যয়ও চলে । একই ছড়ায় 'চিমনিকে এক মাত্রা গ্রেস মার্কা দেওয়া হয়েছে, অথচ “ঠাকরুনকে খর্ব করে তিন মাত্রায় নামানো গেল । অপরাধ ঘটেছে বলে মনে করি নি । কুস্তির আখড়ায় ভিত্তিকে ধরে জল ছিটাইয়া দাও, ধূলা যাক মরে । রাস্তা দিয়ে কুস্তিগিরি চলে ঘেঁষাৰ্ঘেষি, একটা নয়। দুটাে নয় একশোর বেশি। অপর পক্ষে