পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G. We R A রবীন্দ্র-রচনাবলী এ ছন্দে শব্দগুলি পরস্পরকে অস্থিরভাবে ঠেলা দিচ্ছে। একে জোড়ামাত্রার ছন্দে রূপান্তরিত করা यक । যেথায় বিংশতি কোটি মানবের বাস সেই তো ভারতবর্ষ যবনের দাস শৃঙ্খলেতে বাধা পড়ে আছে। gg biGG rNg আলোচ্য নয় মাত্ৰাবী ছন্দে তিন সংখ্যার অস্থিরতা শেষ পর্যন্তই রয়ে গেছে । সেটা উচিত নয়, ছয় মাত্রার পরে থামবার একটুখানি অবকাশ দেওয়া ভালো- এমন তর্ক তোলা যেতে পারে । কিন্তু ছন্দের সিদ্ধান্ত তর্কে হয় না, ওটার মীমাংসা কানো ! সৌভাগ্যক্রমে এ সভায় সুযোগ পেয়েছি। কানের দরবারে আরজি পেশ করবার। নয় মাত্রার চঞ্চল ভঙ্গিতে কান সায় দিচ্ছে না, এ কথা যদি সুধীজন বলেন তা হলে অগত্যা চুপ করে যাব, কিন্তু তবুও নিজের কানের স্বীকৃতিকে অশ্রদ্ধা করতে পারব না । “আঁধার রজনী পোহালো’ কবিতাটি গানরূপে রচিত । সংগীতাচাৰ্য ভীমরাও শাস্ত্রী মৃন্দঙ্গের বোলে একে যে তালের রূপ দিয়েছিলেন তাতে দুটি আঘাত এবং একটি ফাঁক । যথা S R O আঁধার | রজনী | পোহালো । এ কথা সকলেরই জানা আছে যে, ফাকটা তালের শেষ ক্টোক, তার পরে পুনরাবর্তন । এই গানের স্বাভাবিক ঝোক প্রত্যেক তিন মাত্রায় এবং এর তালের অর্থাৎ ছন্দের সম্পূর্ণতা তিনমাত্রাঘটিত তিন ভাগে । অমূল্যবাবু বা শৈলেন্দ্রবাবু যদি অন্য কোনো রকমের ভাগ ইচ্ছা করেন তবে রচয়িতার ইচ্ছার সঙ্গে তার ঐক্য হবে না, এর বেশি আমার আর কিছু বলবার নাই । উত্তরদিগন্ত ব্যাপি দেবতাত্মা হিমাদ্রি বিরাজে, দুই প্রান্তে দুই সিন্ধু, মানদণ্ড যেন তারি মাঝে ; এই ছন্দকে আঠারো মাত্রা যখন বলি তখন সমগ্ৰ পদের মাত্ৰাসংখ্যা গণনা করেই বলে থাকি । আট মাত্রার পরে এর একটা সুস্পষ্ট বিরাম আছে বলে এর আঠারো মাত্রার সীমানার বিরুদ্ধে নালিশ চলে না । আমাদের হাতে তিন পর্ব আছে । মণিবন্ধ পর্যন্ত এক ; এটি ছোটাে পর্ব ; কনুই পর্যন্ত দুই ; কনুই থেকে কাধি পর্যন্ত তিন ; যাকে আমরা সমগ্র বাহু বলি সে এই তিন পৰ্ব্ব মিলিয়ে । আমাদের দেহে এক বাহু অনা বাহুর অবিকল পুনরাবৃত্তি । প্রত্যেক ছন্দেরই এমনিতরো একটি সম্পূর্ণ রূপকল্প অর্থাৎ প্যাটারন আছে। ছন্দোবদ্ধ কাব্যে সেই প্যাটারনকেই পুনঃপুনিত করে। সেই প্যাটারনের সম্পূর্ণ সীমার মধ্যেই তার নানা পর্ব পর্বাঙ্গ প্রভৃতি যা-কিছু ! সেই সমগ্র প্যাটারনের মাত্রাই সেই ছন্দের মাত্রা । আঁধার রজনী পোহালো' গানটিকে এইজন্যেই নয় মাত্রার বলেছি। যেহেতু প্ৰত্যেক নয় মাত্রাকে নিয়েই তার পুনঃপুন আবর্তন । ν কোন ছন্দ কী রকম ভাগ করে পড়তে হবে, এ নিয়ে মতান্তর হওয়া অসম্ভব নয় । পুরাতন ছন্দগুলির নাম-অনুসারে সংজ্ঞা আছে। নতুন ছন্দের নামকরণ হয় নি । এইজন্যে তার আবৃত্তির কোনো নিশ্চিত নির্দেশ নেই । কবির কল্পনা এবং পাঠকের রুচিতে যদি অনৈক্য হয় তবে কোনো আইন নেই যা নিয়ে নালিশ চলতে পারে । বর্তমান প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য এই যে, আমি যখন স্পষ্টতই আমার কোনো কাব্যের ছন্দকে নয় মাত্রার বলছি তখন সেটা অনুসরণ করাই বিহিত । হতে পারে তাতে কানের তৃপ্তি হবে না। না। যদি হয় তবে সে দায় কবির। কবিকে নিন্দা করবার অধিকার সকলেরই আছে, তার রচনাকে সংশোধন করবার অধিকার কারও নেই । এই উপলক্ষে একটা গল্প মনে পড়ছে। গল্পটা বানানো নয়। পার্লামেনটে দর্শকদের বসবার আসনে দুটি শ্রেণীভাগ আছে । সম্মুখভাগের আসনে বসেন যারা খ্যাতনামা, পশ্চাতের ভাগে বসেন অপর-সাধারণ । দুই বিভাগের মাঝখানে কেবল একটিমাত্র দড়ি বাধা । একজন ভারতীয় দশক সেই