পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(ሰ ዓbr রবীন্দ্র-রচনাবলী একবারের বেশি দুবার বললে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিই। ; কবি বরাবরকার মতো বলতে থাকলেনমেঘৈর্মেদুরমম্বরং বনভূবঃ শ্যামান্তীমালদ্রুমৈঃ । কবির মনের মেঘলা দিনের সংবেগ চড়ে বসল ছন্দ-পক্ষিরাজের পিঠে, চলল। চিরকালের মনোহরণ করতে । গদ্যে প্রধানত অৰ্থবান শব্দকে বৃহবন্ধ করে কাজে লাগাই, পদ্যে প্রধানত ধ্বনিমান শব্দকে বৃহবন্ধ করে সাজিয়ে তোলা হয়। বৃহ শব্দটা এখানে অসাৰ্থক নয়। ভিড় জমে রাস্তায়, তার মধ্যে সাজাই-বাছাই নেই, কেবল এলোমেলো চলাফেরা । সৈন্যের বৃহ সংহত সংযত, সাজাই-বাছাইয়ের দ্বারা সবগুলি মানুষের যে সম্মিলন ঘটে তার থেকে একটা প্রবল শক্তি উদভাবিত হয় । এই শক্তি স্বতন্ত্রভাবে যথেচ্ছভাবে প্রত্যেক সৈনিকের মধ্যে নেই। মানুষকে উপাদান করে নিয়ে ছন্দোবিন্যাসের দ্বারা সেনাপতি এই শক্তিরূপের সৃষ্টি করে । এ যেন বহু-ইন্ধনের হােমহুতাশন থেকে যাজ্ঞসেনীর আবির্ভাব । ছন্দঃসজ্জিত শব্দবৃহে ভাষায় তেমনি একটি শক্তিরাপের সৃষ্টি । চিত্রসৃষ্টিতেও এ কথা খাটে । তার মধ্যে রেখার ও রঙের একটা সামঞ্জস্যবদ্ধ সাজাই-বাছাই আছে। সে প্রতিরূপ নয়, সে স্বরূপ । তার উদ্দেশ্য রিপোর্ট করা নয়, তার উদ্দেশ্য চৈতন্যকে কবুল করিয়ে নেওয়া ‘এই তো স্বয়ং দেখলুম। গুণীর হাতে রেখা ও রঙের ছন্দোবন্ধন হলেই ছবির নাড়ির মধ্যে প্ৰাণের স্পন্দন চলতে থাকে, আমাদের চিৎস্পন্দন তার লয়টাকে স্বীকার করে, ঘটতে থাকে। গতির সঙ্গে গতির সহযোগিতা বাতাসের হিল্লোলের সঙ্গে সমুদ্রের তরঙ্গের মতো । ভারতবর্ষে বেদমন্ত্রে ছন্দ প্ৰথম দেখা দিল, ময়ে প্রবেশ করল প্ৰাণের বেগ, সে প্রবাহিত হতে পারল নিশ্বাসে প্রশ্বাসে, আবর্তিত হতে থাকলে মননধারায় । ময়ের ক্রিয়া কেবল জ্ঞানে নয়, তা প্ৰাণে মনে ; স্মৃতির মধ্যে তা চিরকাল স্পন্দিত হয়ে বিরাজ করে । ছন্দের এই গুণ । ছন্দকে কেবল আমরা ভাষায় বা রেখায় স্বীকার করলে সব কথা বলা হয় না। শব্দের সঙ্গে সঙ্গে ছন্দ আছে ভাবের বিন্যাসে, সে কানে শোনবার নয়, মনে অনুভব করবার। ভাবকে এমন করে সাজানো যায় যাতে সে কেবলমাত্র অর্থবোধ ঘটায় না, প্ৰাণ পেয়ে ওঠে আমাদের অন্তরে । বাছাই করে সুবিন্যস্ত সুবিভক্ত করে ভাবের শিল্প রচনা করা যায়। বর্জন গ্ৰহণ সঙ্গীকরণের বিশেষ প্ৰণালীতে ভাবের প্রকাশে সঞ্চারিত হয় চলৎশক্তি । যেহেতু সাহিত্যে ভাবের বাহন ভাষা, সেই কারণে সাহিত্যে যে ছন্দ আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ সে ছন্দ ভাষার সঙ্গে জড়িত। তাই, অনেক সময়ে এ কথাটা ভুলে যাই যে, ভাবের ছন্দই তাকে অতিক্রম করে আমাদের মনকে বিচলিত করে । সেই ছন্দ ভাবের সংযমে, তার বিন্যাসনৈপুণ্যে । জ্ঞানের বিষয়কে প্ৰাঞ্জল ও যথার্থ করে ব্যক্ত করতে হলেও প্রকাশের উপাদানকে আঁটি করে তাকে ঠিকমত শ্রেণীবদ্ধ করা চাই। সে তাকে প্রাণের বেগ দেবার জন্যে নয়, তাকে প্রকৃষ্ট অর্থ দেবার জন্যেই । শংকরের বেদান্তভাষ্য তার একটি নিদর্শন । তার প্রত্যেক শব্দই সার্থক, তার কোনো অংশেই বাহুল্য নেই, তাই তত্ত্বব্যাখ্যা সম্বন্ধে তা এমন সুস্পষ্ট । কিন্তু এই শব্দযোজনার সংযমটি যৌক্তিকতার সংযম, আর্থিক যথাতথ্যের সংযম, শব্দগুলি লজিক-সংগত পঙক্তিবন্ধনে সুপ্রতিষ্ঠিত । কিন্তু শংকরাচার্যের নামে যে আনন্দলহরী কাব্য প্রচলিত তার ভাবের প্রকাশ লজিকের পক্ষ থেকে অসংযত, অথচ প্ৰাণবান৷ গতিমান রূপসৃষ্টির পক্ষ থেকে তার কলাকীেশাল দেখতে পাই। वश्ीनिवॄद्र अवलक्ष्ौख्ॉब्रठिभिद्रविषा१ कॄन्प्रौकृठभि नशैीनार्कंस्मिन्नभम् । তনোতু ক্ষেমং নস্তব বদনসৌন্দর্যলহরীপরীবাহস্ৰোতঃসরণিরিব সীমান্তসারণিঃ । ঐ সিঁথির রেখা আমাদের কল্যাণ দিক যে-রেখাটি তোমার মুখসৌন্দর্যধারার স্রোতঃপথের মতো। আর যে-সিদূর আঁকা রয়েছে তোমার ঐ সিঁথিতে সে যেন নবীন সূর্যের আলো, তাকে ঘনকবরীভারের অন্ধকার শত্রু হয়ে বন্দী করে রেখেছে।