পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VS 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ধূর্জটিপ্ৰসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত যখন কবিতাগুলি পড়বে তখন পূর্বাভ্যাসমত মনে কোরো না ওগুলো পদ্য। অনেকে সেই চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে রুষ্ট হয়ে ওঠে । গদ্যের প্রতি গদ্যের সম্মানরক্ষা করে চলা উচিত । পুরুষকে সুন্দরী রমণীর মতো ব্যবহার করলে তার মর্যাদাহানি হয় । পুরুষেরও সৌন্দৰ্য আছে, সে মেয়ের সৌন্দর্য নয়- এই সহজ কথাটা বলবার প্রয়াস পেয়েছি। পরবতী পাতাগুলিতে । ২৬ আশ্বিন ১৩৩৯ NR ‘পুনশ্চর কবিতাগুলোকে কোন সংজ্ঞা দেবে। পদ্য নয়, কারণ পদ নেই। গদ্য বললে, অতিবাপ্তি দোষ ঘটে । পক্ষিরাজ ঘোড়াকে পাখি বলবে না ঘোড়া বলবে ? গদ্যের পাখা উঠেছে। এ কথা যদি বলি, তবে শত্ৰুপক্ষ বলে বসবে, “পিপড়ার পাখা ওঠে মরিবার তরে ' জলে স্থলে যে সাহিত্য বিভক্ত, সেই সাহিত্যে এ জিনিসটা জল নয়, তাই বলে মাটিও নয় । তা হলে খনিজ বলতে দোষ আছে কি । সোনা বলতে পারি এ মন অহংকার যদি-বা মনে থাকে মুখে বলবার সাহস নেই । না হয় তীবাই হল । অর্থাৎ এমন কোনো ধাতু যাতে মূর্তি-গড়ার কাজ চলে। গদাধরের মূর্তিও হতে পারে, তিলোত্তমারও হয়। অর্থাৎ রূপরসাত্মক গদ্য, অর্থভারবহু গদ্য নয় | তৈজস গদ্য । সংজ্ঞা পরে হবে, আপাতত প্রশ্ন এই- ওতে চেহারা গড়ে উঠেছে কি না । যদি উঠে থাকে তা शCब्लड्ने ठूछन । ৭। কার্তিক ১৩৩৯ KO) গানের আলাপের সঙ্গে "পুনশ্চ' কাব্যগ্রন্থের গদ্যিকারীতির যে তুলনা করেছ সেটা মন্দ হয় নি । কেননা আলাপের মধ্যে তালটা বাধনছাড়া হয়েও আত্মবিস্মত হয় না । অর্থাৎ, বাইরে থাকে না মৃদঙ্গের বোল, কিন্তু নিজের অঙ্গের মধ্যেই থাকে চলবার একটা ওজন । কিন্তু সংগীতের সঙ্গে কাব্যের একটা জায়গায় মিল নেই । সংগীতের সমস্তটাই অনির্বাচনীয় । কাব্যে বচনীয়তা আছে সে কথা বলা বাহুল্য । অনির্বচনীয়তা সেইটােকেই বেষ্টন করে হিল্লোলিত হতে থাকে, পৃথিবীর চার দিকে বায়ুমণ্ডলের মতো। এ পর্যন্ত বচনের সঙ্গে অনির্বাচনের, বিষয়ের সঙ্গে রসের গাঠ বেঁধে দিয়েছে ছন্দ । পরস্পরকে বলিয়ে নিয়েছে, যাদেতদ হৃদয়ং মম তদন্তু হৃদয়ং তব । বাক এবং অবাক বাধা পড়েছে ছন্দের মাল্যবন্ধনে । এই বাক এবং অবাক-এর একান্ত মিলনেই কাব্য । বিবাহিত জীবনে যেমন কাব্যেও তেমনি, মাঝে মাঝে বিরোধ বাধে, উভয়ের মাঝখানে ফাক পড়ে যায়, ছন্দও তখন জোড় মেলাতে পারে না । সেটাকেই বলি আক্ষেপের বিষয় । বাসরঘরে এক শয্যায় দুই পক্ষ দুই দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকার মতোই সেটা শোচনীয়। তার চেয়ে আরো শোচনীয়, যখন এক কনো না খেয়ে বাপের বাড়ি যান । যথােপরিমিত খাদ্যবস্তুর প্রয়োজন আছে, এ কথা অজীর্ণ রোগীকেও স্বীকার করতে হয় । কোনো কোনো কাব্যে বাগদেবী স্কুলখাদ্যাভাবে ছায়ার মতো হয়ে পড়েন । সেটাকে আধ্যাত্মিকতার লক্ষণ বলে উল্লাস না করে আধিভৌতিকতার অভাব বলে বিমর্ষ হওয়াই উচিণ্ড । ‘পুনশ্চ’ কাব্যগ্রন্থে আধিভৌতিককে সমাদর করে ভোজে বসানো হয়েছে। যেন জামাই ষষ্ঠী । এ মানুষটা পুরুষ । একে সোনার ঘড়ির চেন পরলেও অলংকৃত করা হয় না। তা হোক, পাশেই আছেন কঁকনপরা অর্ধবিগুষ্ঠিতা মাধুরী, তিনি তার শিল্পসমৃদ্ধ ব্যজনিকার আন্দোলনে এই ভোজের মধ্যে অমরাবতীর মৃদুমন্দ হাওয়ার আভাস এনে দিচ্ছেন । নিজের রচনা নিয়ে অহংকার করছি মনে করে আমাকে হঠাৎ সদৃপদেশ দিতে বোসো না । আমি যে কীর্তিটা করেছি। তার মূল্য নিয়ে কথা হচ্ছে না,