পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারস্যে \96łGł শ্ৰেণীবিভাগ ছিল কঠিন, তদনুসারে শ্রেণীগত অবিচার ও অবমাননা জনসাধারণের পক্ষে নিশ্চয়ই পীড়ার কারণ হয়েছিল। স্বসম্প্রদায়ের মধ্যে ঈশ্বরপূজার সমান অধিকার ও পরম্পরের নিবিড় । আীয়তা এই ধর্মের প্রতি প্রজাদের চিত্ত আকর্ষণ করেছিল সন্দেহ নেই। এই ধর্মের প্রভাবে পারস্যে শিল্পকলার রূপ পরিবর্তন করাতে রেখালংকার ও ফুলের কাজ প্রাধান্য লাভ করেছিল। তার পরে তুর্কিরা এসে আরব সাম্রাজ্য ও সেইসঙ্গে তাদের বহুতর কীর্তি লণ্ডভণ্ড করে দিলে, অবশেষে এল মোগল । এই সকল কীর্তিনাশার দল প্ৰথমে যত উৎপাত করুক, ক্রমে তাদের নিজেদেরই মধ্যে শিল্পোৎসাহ সঞ্চারিত হতে লাগল। এমনি করে যুগান্তে যুগন্তে ভাঙচুর হওয়া সত্বেও পারস্যে বার বার শিল্পের নবযুগ এসেছে। আকেমেনীয় সাসানীয় আরবীয় সেলজুক মোগল এবং অবশেষে সাফাবি শাসনের পর্বে পর্বে শিল্পের প্রবাহ বাক ফিরে ফিরে চলেছে, তবু লুপ্ত হয় নি, এরকম দৃষ্টান্ত বোধ হয় BOSDTa LLK E DD DS ২৯ এপ্ৰেল । ইসফাহান থেকে যাত্রা করা গেল। তেহেরানের দিকে । নগরের বাহিরেও অনেকদূর পর্যন্ত সবুজ খেত, গাছপালা ও জলের ধারা । মাঝে মাঝে গ্রাম । কোথাও-বা তারা পরিত্যক্ত । মাটির - প্রাচীর ও দেওয়ালগুলি জীৰ্ণতার নানা ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে, ভিতের উপরে ছাদ নেই। এক জায়গায় এইরকম ভাঙা শুন্য গ্রামের সামনেই পথের ধারে পড়ে আছে। উটের কঙ্কাল। ঐ ভাঙা ঘরগুলো, আর ঐ প্রাণীটার বুকের পাজর একই কথা বলছে। প্রাণের ভারবাহী যে-সব বাহন প্রাণহীন কিছুদিন তারাই থাকে বােবার মতো পড়ে, আর প্রাণ যায় চলে। এখানকার মাটির ঘর যেন মাটির ঠাকু- উপস্থিত প্রয়োজনের ক্ষণিক তাগিদে খাড়া করা, তার পরে তার মূল্য ফুরিয়ে যায়। দেখি আর ভাবি, এই তো ভালো । গড়ে তোলাও সহজ, ফেলে যাওয়াও তাই । বাসার সঙ্গে নিজেকে ও অপরিচিত আগামীকালকে বেঁধে রাখবার বিড়ম্বনা নেই। মানুষের কেবল যদি একটা মাত্র দেহ থাকত বংশানুক্রমে সকলের জন্যে, খুব মজবুত চতুর্দন্ত হাতির হাড় আর গণ্ডারের সাত-পুরু চামড়া দিয়ে খুব পাকা করে তৈরি চোদ্দ। পুরুষের একটা সরকারি দেহ, যেটা অনেকজনের পক্ষে মোটামুটিভাবে উপযোগী, কিন্তু কোনো-একজনের পক্ষে প্রকৃষ্টিভাবে উপযুক্ত নয়, নিশ্চয় সেই দেহদুর্গটা প্ৰাণপুরুষের পছন্দসই হত না। আপনি বসতবাড়িকে বংশানুক্রমে পাকা করে তোলাবার চেষ্টা প্ৰাণধর্মের বিরুদ্ধ । পুরানো বাড়ি আপন যুগ পেরতে না পেরতে পোড়োবাড়ি হতে বাধ্য। পিতৃপুরুষের অপব্যয়কে উপেক্ষা করে নতুন বংশ নতুন পাড়ায় গিয়ে বাসা করে। আশ্চর্য এই যে, সেও ভাবী ভগ্নাবশেষ সৃষ্টি করবার জন্যে দশ পুরুষের মাপে অচল ভিত বানাতে থাকে। অর্থাৎ, মরে গিয়েও সে ভাবী কালকে জুড়ে আপন বাসায় বাস করবে। এই কল্পনাতেই মুন্ধ। আমার মনে হয়, যে-সব ইমারত ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়, স্থায়িত্বকামী স্থাপত্য তাদেরই সাজে । কিছু দূরে গিয়ে আবার সেই শূন্য শুষ্ক ধরণী, গেরুয়া চাদরে ঢাকা তার নিরলংকৃত নিরাসক্তি । মধ্যাহ্নে গিয়ে পৌঁছলাম দেলিজানে। ইসফাহানের গভর্নর। এখানে তাবু ফেলে আমাদের জন্যে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছেন । এই তাবুতে আমাদের আহার হল। কুমশহর এখান থেকে আরো কতকটা দূরে। তার পাশ দিয়ে আমাদের পথ। দূর থেকে দেখতে পাওয়া যায় স্বর্ণমণ্ডিত তার বিখ্যাত মসজিদের ऐ७ा । বেলা পাচটার সময় গাড়ি পৌছল। তেহেরানের কাছাকাছি। শুরু হল তার আদ্যপরিচয় । নগরপ্রবেশের পূর্বে বর্তমানযুগের শৃঙ্গ ধ্বনিমুখর নাকিবের মতো দেখা গেল একটা কারখানাঘর- এটা চিনির কারখানা । এরই সংলগ্ন বাড়িতে জরথুষ্ট্ৰীয় সম্প্রদায় একদল লোক আমাকে অভ্যর্থনার জন্য নামালেন । ক্লান্তদেহের খাতিরে দ্রুত দুটি নিতে হল। তার পরে তেহেরানের পীেরজনদের পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা গ্ৰহণ করবার জন্য একটি বৃহৎ তাবুতে প্ৰবেশ করলেম । এখানকার শিক্ষাবিভাগের মন্ত্রী