পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SIG? Me রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ছিলেন সভাপতি । এখানে চা খেয়ে স্বাগতসম্ভাষণের অনুষ্ঠান যখন শেষ হল সভাপতি আমাকে নিয়ে গেলেন একটি বৃহৎ বাগানবাড়িতে । নানাবর্ণ ফুলে খচিত তার তৃণআন্তরণ । গোলাপের গন্ধমাধুর্যে উচ্ছসিত তার বাতাস, মাঝে মাঝে জলাশয় এবং ফোয়ারা এবং স্নিগ্ধচ্ছায়া তরুশ্রেণীর বিচিত্র সমাবেশ । যিনি আমাদের জন্যে এই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র গেছেন তাকে যে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করব এমন সুযোগ পাই নি । তারই একজন আত্মীয় আগা আসাদি আমাদের শুশ্ৰুষার ভার নিয়েছেন। ইনি নায়র্কের কলম্বিয়া য়ুনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট, আমার সমস্ত ইংরেজি রচনার সঙ্গে সুপরিচিত । অভ্যাগতবর্গের সঙ্গে আমার কথোপকথনের সেতুস্বরূপ ছিলেন ইনি । কয়েকদিন হল ইরাকের বাজা ফইসল। এখানে এসেছেন । তাকে নিয়ে এখানকার সচিবেরা অত্যন্ত বাস্ত । আজ অপরাহুের মৃদু রৌদ্রে বাগানে যখন বসে আছি ইরাকের দুইজন রাজদূত আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন । রাজা বলে পাঠিয়েছেন তিনি আমার সঙ্গে আলাপ করতে ইচ্ছা করেন । আমি তাদের জানালেম, ভারতবর্ষে ফেরবার পথে বোগদাদে রাজার দর্শন নিয়ে যাব । আজ সন্ধার সময় একজন ভদ্রলোক এলেন, তার কাছ থেকে বেহালায় পারসিক সংগীত শুনলুম ; একটি সুর বাজালেন, আমাদের ভৈরো রামকেলির সঙ্গে প্রায় তাব কোনো তফাত নেই । এমন দরদ দিয়ে বাজালেন, তানগুলি পদে পদে এমন বিচিত্র অথচ সংযত ও সুমিত যে আমার মনের মধ্যে মাধুর্য নিবিড় হয়ে উঠল । বোঝা গেল ইনি ওস্তাদ, কিন্তু ব্যাবসাদাব নন। } ব্যাবসাদারিতে নৈপূণ। বাড়ে, কিন্তু বেদনাবোধ কমে যায়— ময়রা যে কারণে সন্দেশের রুচি হাবায় । আমাদেব দেশের গাইয়ে-বাজিয়েরা কিছুতেই মনে রাখে না যে আর্টের প্রধান তত্ত্ব তার পরিমিতি ! কেননা রূপকে সুব্যক্তি করাই তার কাজ । বিহিত সীমার দ্বারা রূপ সত্যু হয়, সেই সীমা ছাডিয়ে অতিকৃতিই বিকৃতি । মানুষের নাক যদি আপন মর্যাদা পেরিয়ে হাতির শুড হওয়ার দিকে এগোতে থাকে, তার ঘাডটা যদি জিরাফের সঙ্গে পাল্লা দেবার জন্যে মরিয়া হয়ে মেতে ওঠে, তা হলে সেই আতিশয্যে বস্তুগৌরব বাডে, রূপগৌরব বাড়ে না । সাধারণত আমাদের সংগীতের আসরে এই অতিকায় আতিশয্য মত্ত করার মতো নামে পদ্মবনে । তার তানগুলো অনেক স্থলে সামান্য একটু-আধটু হেরফের করা পুনঃপুনঃ পুনরাবৃত্তি মাত্র । তাতে স্তুপ বাড়ে, রূপ নষ্ট হয় । তন্বী রূপসীকে হাজাব পাকে জড়িয়ে ঘাগরা এবং ওড়না পরানোর মতো ! সেই ওড়না বহুমূল্য হতে পারে, তবু রূপকে অতিক্রম করবার স্পর্ধা তাকে মানায় না ! এরকম অদ্ভুত রুচিবিকারের কারণ এই যে, ওস্তাদের স্থির করে রেখেছেন সংগীতের প্রধান উদ্দেশ্য সমগ্র গানটিকে তার আপনি সুষমায় প্রকাশ করা নয়, রাগরাগিণীকেই বীরবিক্রমে আলোডিত ফেনিল করে তোলা- সংগীতের ইমারতটিকে আপনি ভিত্তিতে সুসংযমে দাড করানো নয়, ইটকাঠ-চুনসুরকিকে কণ্ঠ-কামানের মুখে সগৰ্জনে বর্ষণ করা । ভুলে যায় সুবিহিত সমাপ্তির মধ্যেই আর্টের পর্যাপ্তি । গান যে বানায় আর গান যে করে, উভয়ের মধ্যে যদি-বা দাবদের যোগ থাকে। তবু সৃষ্টিশক্তির সাম্য থাকা সচরাচর সম্ভবপর নয় । বিধাতা তার জীবসূষ্টিতে নিজে কেবল যদি কঙ্কালের কাঠামোটুকু খাড়া করেই ছুটি নিতেন, যার-তার উপর ভার থাকত সেই কঙ্কালে যত খুশি মেদমাংস চডাবার, নিশ্চয়ই তাতে অনাসৃষ্টি ঘটত । অথচ আমাদের দেশে গায়ক কথায় কথায় বচয়িতার অধিকার নিয়ে থাকে, তখন সে সৃষ্টিকর্তার কাধের উপর চড়ে ব্যায়ামকর্তার বাহাদুরি প্রচার করে । উত্তরে কেউ বলতে পারেন, ভালো তো লাগে । কিন্তু পেটকের ভালো লাগা আর বসিকের ভালো লাগা এক নয় । কী ভালো লাগে তাই নিয়ে তর্ক । যে ময়রা রসগোল্লা তৈরি করে মিষ্টাগ্লের সঙ্গে যথাপরিমিত রস সে নিজেই জুগিয়ে দেয় । পরিবেশনকর্তা মিষ্টান্ন গড়তে পারে না, কিন্তু দেদার চিনির রস ঢেলে দেওয়া তার পক্ষে সহজ । সেই চিনির রস ভালো লাগে অনেকের ; তা হোক গে, তবুও BB DB DBBBDD BDB BB DDD DDD SS ইতিমধ্যে একজন সেকেলে ওস্তাদ এসে আমাকে বাজনা শুনিয়ে গেছেন, তার থেকে বুঝলুম এখানেও গানের পথে সন্ধ্যা হয় এবং বাঘের ভয় ঘটে । এখানেও যে খুশি সরস্বতীর বীণায় রবারের তার চড়িয়ে তাকে কেবলমাত্র গায়ের জোরে টেনে টেনে দীর্ঘ করতে পারে ।