পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পারস্যে &ኃ(፩ ዓ আজ পারস্যরাজের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হল। প্রাসাদের বৃহৎ কার্পেট-পাত ঘরে আসবাব আড়ম্বর নেই বললেই হয় । রাজার গায়ে থাকি-রঙের সৈনিক-পরিচ্ছদ । অতি অল্পদিনমাত্র হল অতি দ্রুতহন্তে পারস্যরাজত্বকে দুৰ্গতির তলা হতে উদ্ধার করে ইনি তার হৃদয় অধিকার করে বসে আছেন। এমন অবস্থায় মানুষ আপন সদ্যপ্রতিষ্ঠিত গীেরবকে অতিমাত্র সমারোহদ্বারা ঘোষণা করবার চেষ্টা করে থাকে । কিন্তু ইনি আপন রাজমহিমাকে অতিসহজেই ধারণ করে আছেন। খুব সহজ মহন্ধের মানুষ ; ঐর মুখের গড়নে প্রবল দৃঢ়তা, চোখের দৃষ্টিতে প্ৰসন্ন ঔদার্য। সিংহাসনে না ছিল তার বংশগত অধিকার, না ছিল আভিজাত্যের দাবি ; তবু যেমনি তিনি রাজাসনে বসলেন অমনি প্রজার হৃদয়ে ঠার স্থান অবিলম্বে স্বীকৃত হল। দশ বছর মাত্র তিনি রাজা হয়েছেন। কিন্তু সিংহাসনের চারিদিকে আশঙ্কা উদবেগের দুৰ্গম বেড়া সতর্কতায় কণ্টকিত হয়ে ওঠে নি। সেদিন অমিয় দেখে এসেছেন নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে, রাজা স্বয়ং পথে দাঁড়িয়ে বিনা আড়ম্বরে পরিদর্শনে নিযুক্ত । ইতিমধ্যে একদিন প্রধান রাজমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হল । তাকে বললুম, বহুযুগের উগ্ৰ সংস্কারকে নম্র করে দিয়ে তারা এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষবুদ্ধিকে নির্বিষ করেছেন এই দেখে আমি আনন্দিত । তিনি বললেন, যতটা আমাদের ইচ্ছা ততটা সফলতা এখনো পাই নি। মানুষ তো আমরা সকলেই, আমাদের মধ্যে মানুষোচিত সম্বন্ধ সহজ ও ভদ্র না হওয়াই অদ্ভুত । আমি যখন বললুম পারস্যের বর্তমান উন্নতিসাধনা একদিন হয়তো ভারতবর্ষের দৃষ্টান্তস্থল হতে পারে, তিনি বললেন, রাষ্ট্ৰীয় অবস্থা সম্বন্ধে ভারতবর্ষ ও পারস্যের মধ্যে প্ৰভেদ বিস্তর । মনে রাখতে হবে, পারস্যের জনসংখ্যা এক কোটি বিশ লাখ, ভারতবর্ষের ত্ৰিশ কোটির উপর- এবং সেই ত্রিশ কোটি বহুভাগে বিভক্ত । পারস্যের সমস্যা অনেক বেশি সরল, কেননা আমরা জাতিতে ধর্মে ভাষায় এক । আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে শাসনব্যবস্থাকে নির্দোষ এবং সম্যক উপযোগী করে তোলা । আমি বললুম, দেশের প্রকাণ্ড আয়তনটাই তার প্রকাণ্ড শক্ৰ । চীন ভারতবর্ষ তার প্রমাণ । জাপান ছোটাে বলে এত শীঘ্ৰ বড়ো হয়েছে। স্বভাবতই ঐকবদ্ধ অন্য সভ্যদেশের রাষ্ট্রনীতি ভারতবর্ষে খাটবে DSSLBBDD DBB uD BB BBDB uB DBD LDBBD DDDDBD DBDBSS তিনি চলে গেলে আমি বসে বসে ভাবতে লাগলুম ঐক্যটাই আমাদের দেশে সব প্রথম ও সব চেয়ে বেশি চাই, অথচ ঐটের বাধা আমাদের হাড়ে হাড়ে। ভারতীয় মুসলমানের গোড়ামি নিজের সমাজকে নিজের মধ্যে একান্ত কঠিন করে বাধে, বাইরেকে দূরে ঠেকায় ; হিন্দুর গোড়ামি নিজের সমাজকে নিজের মধ্যে হাজারখানা করে, তার উপরেও বাইরের সঙ্গে তার অনৈক্য। এই দুই বিপরীতধর্মী সম্প্রদায়কে নিয়ে আমাদের দেশ। এ যেন দুই যমজ ভাই পিঠে পিঠে জোড়া ; একজনের পা ফেলা আর-একজনের পা ফেলাকে প্রতিবাদ করতেই আছে । দুইজনকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করাও যায় না, সম্পূর্ণ ७ & ७ ।। কয়েকজন মোল্লা এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে । প্রধান মোল্লা প্রশ্ন করলেন, নানা জাতির নানা ধর্মগ্রন্থে নানা পথ নির্দেশ করে, তার মধ্য থেকে সত্যপথ নির্ণয় করা যায় কী উপায়ে । আমি বললুম, ঘরের দরজা জানােলা সব বন্ধ করে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, “আলো পাব কী উপায়ে তাকে কেউ উত্তর দেয় চকমকি ?কে- কেউ বলে তেলের প্রদীপ, কেউ বলে মোমের বাতি, কেউ বলে ইলেকট্রিক আলো ছেলে । সেই সব উপকরণ ও প্ৰণালী নানাবিধ, তার ব্যয় যথেষ্ট, তার ফল সমান নয়। যারা পুঁথি সামনে রেখে কথা কয় না, যাদের সহজ বুদ্ধি, তারা বলে, দরজা খুলে দাও । ভালো হও, ভালোবাসো, ভালো করো, এইটেই হল পথ । যেখানে শত্র এবং তত্ত্ব এবং আচারবিচারের কড়াকড়ি সেখানে ধামিকদের অধ্যবসায় কথা-কাটাকাটি থেকে শুরু করে গঙ্গা-কাটাকাটিতে গিয়ে পৌছয়। মোল্লার পক্ষে তর্কের উদ্যম ফুরোয় নি, কিন্তু আমার আর সময় ছিল না।