পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Ver গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশের কালক্রমে ‘জাপানযাত্রী রবীন্দ্র-রচনাবলীর উনবিংশ খণ্ডে (সুলভ দশম) মুদ্রত হইয়াছে এবং রবীন্দ্রশতবার্ষিক সংস্করণ রূপে স্বতন্ত্র সংস্করণ পরিশিষ্ট ও গ্রন্থপরিচয় -সংযুক্ত হইয়া জ্যৈষ্ঠ ১৩৬৯ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হইয়াছে। বর্তমান খণ্ডে “জাপানে-পারস্যে গ্রন্থের কেবলমাত্র ‘পারস্যে অংশ মুদ্রিত হইল। রবীন্দ্র-শতবর্ষপূর্তির উদযাপনে স্বতন্ত্র গ্রন্থাকারে পরিশিষ্ট ও গ্রহপরিচয় -যুক্ত ‘পারস্যযাত্রী ২৫ বৈশাখ ১৩৭০ বঙ্গাব্দে প্ৰকাশিত হয় । () ‘পারস্যের প্রথম পরিচ্ছেদ ১৩৩৯ সালের আষাঢ়-সংখ্যা প্রবাসীতে ‘পারস্য-যাত্ৰা’ নামে বাহির হয় । ২ হইতে ১১ পরিচ্ছেদ পর্যন্ত অবশিষ্ট অংশ ১৩৩৯ সালের শ্রাবণ হইতে ১৩৪০-এর বৈশাখ-সংখ্যা পর্যন্ত বিচিত্ৰা মাসিক পত্রে ‘পারস্যভ্রমণ' নামে ধারাবাহিকভাবে প্ৰথম अकाचिठ श् । পত্রিকায় মুদ্রিত প্ৰথম পাঠ ও রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত পাণ্ডুলিপির সাহায্যে বর্তমান সংস্করণের পাঠ স্থানে স্থানে সংশোধন করা হইয়াছে । ভ্ৰমণবৃত্তান্তটির বিচিত্রায় মুদ্রিত পাঠের কয়েকটি অংশ গ্রন্থপ্রকাশকালে বর্জিত হইয়াছিল । সেই বৰ্জিত অংশগুলি এখানে সংকলিত হইল । সম্পূর্ণতাসাধনের উদ্দেশ্যে পাণ্ডুলিপি হইতে কয়েকটি প্রয়োজনীয় অংশ বন্ধনীচিহ্নিত আকারে উক্ত রচনাংশের কয়েক স্থানে সংযোজিত |- হইয়াছে ৬৪২ পৃষ্ঠার প্রথম অনুচ্ছেদের পূর্বে সভারম্ভে পার্সিভাষায় কিছু বলা হলে পর আমি বললুম। : প্ৰকৃতিতে নিমন্ত্রণের ভার বসন্তষ্কতুর পরে । তার সুগন্ধ পুষ্পগুচ্ছে, পাখির গানে সেই নিমন্ত্রণ । তার আহবান স্বদেশী বিদেশী নির্বিশেষে, তার বিশ্বভাবা তর্জমা করতে হয় না । কবিরা বসন্তঝতুর প্রতীক । তারা আপন দেশ আপনি কালের মধ্যে থেকে সর্বদেশ সর্বকালকে আমন্ত্রণ করে । একদিন দূর থেকে পারস্যের পরিচয় আমার কাছে পৌঁচেছিল। তখন আমি বালক । সে পারস্য ভাবরসের পারস্য, কবির পারস্য । তার ভাষা যদিও পারসিক, তার বাণী সকল মানুষের । আমার পিতা ছিলেন হাফেজের অনুরাগী ভক্ত । তার মুখ থেকে হাফেজের কবিতার আবৃত্তি ও তার অনুবাদ অনেকে শুনেছি। সেই কবিতার মাধুর্য দিয়ে পারস্যের হৃদয় আমাদের হৃদয়ে প্ৰবেশ করেছিল । আজ পারস্যের রাজা আমাকে আমন্ত্ৰণ করেছেন, সেই সঙ্গে সেই কবিদের আমন্ত্রণও মিলিত । আমি তাদের উদ্দেশে আমার সকৃতজ্ঞ অভিবাদন অৰ্পণ করতে চাই যাদের কাব্যসুধা জীবনান্তকাল পর্যন্ত আমার পিতাকে এত সান্তনা এত আনন্দ দিয়েছে । [কবির আপন ভাষায় যদি দিতে পারতুম। তবেই আমার যোগ্য হত । যে ভাষা। অগত্যা ব্যবহার করছি আমার ভারতী সে ভাষায় সম্পূৰ্ণ সায় দেন না । তাই আমি এখানে যেন মুজিয়ামে-সাজানো পাখি- তৰ্জমার আড়ষ্টতায় আমার পাখা বন্ধ- সে পাখাবিস্তার করে মন উড়তে পারে না, সে পাখায় সজীব প্ৰাণের বর্ণচ্ছটাময় নৃত্য নেই। তা হােক, মীেনের মধ্যে যে বাণী অনুচ্চারিত, বন্দনায় তারও ব্যবহার হয়ে থাকে । সেই আন্তরিক বাণীর দ্বারাই পারস্যের অমর কবিদের আমি আজ অভিবাদন করি ; সেই সঙ্গে পারস্যের অমর আত্মকেও আমার নমস্কার, যে আত্মা ইতিহাসের উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে বিচিত্র সৌন্দর্যে শৌর্যে কল্যাণে ভাবীকালের দূরদিগন্তব্যাপী ক্ষেত্রে নিজেকে গীেরবান্বিত করবে।] আমি বলার পর ধন্যবাদ জানিয়ে ও পারস্যরাজ্যের প্রতি শ্ৰদ্ধা নিবেদন করে ইরানী কিছু বললেন । কৌতুহলী জনতার মধ্য দিয়ে গোধূলির আলোকে গবর্নরের সঙ্গে তার প্রাসাদে ফিরে এলুম। -বিচিত্রা । আশ্বিন ১৩৩৯, পৃ. ২৯৭-৯৮