পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vatre রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী সঙ্গে মানুষের আত্মীয়তা সত্য হয়ে ওঠে । তাই আজ আমি এই কামনা ঘোষণা করি যে, আমাদের মধ্যে সাধনার মিলন ঘটুক । এবং সেই মিলনে প্ৰাচ্য মহাদেশ মহতী শক্তিতে জেগে উঠুক- তার সাহিত্য, তার কলা, তার নূতন নিরাময় সমাজনীতি, তার অন্ধসংস্কারমুক্ত বিশুদ্ধ ধর্মবুদ্ধি, তার আত্মশক্তিতে অবসাদহীন শ্রদ্ধা । আমি আপন দুর্বল দেহের অনুনয় অস্বীকার করে এই দেশে এসেছি তার সর্বপ্রধান কারণটি বক্তৃতার উপসংহারে জানিয়ে যেতে চাই। মানবিকতার দিক থেকে যা-কিছু শ্রেষ্ঠ পূর্বমহাদেশের আমরা স্বভাবতই তার কাছে মাথা নত করি, যান্ত্রিকতায় যা সুনিপুণ তার কাছে নয়। নিজেকে জয় করে যিনি আপন ভাগ্যের উপর জয়ী হন তাকেই আমরা বীর বলে স্বীকার করি । বর্তমান পারস্যরাজের চরিত্যকথা আমার আপনি দেশের প্রান্তে বসেও শুনেছি, এবং সেই সঙ্গে দেখতে পেয়েছি দূরে দিকসীমায় নবপ্রভাতের সূচনা। বুঝেছি, এশিয়ার কোনোস্থানে যথার্থ একজন লোকনেতারূপে স্বজাতির ভাগ্যনেতার অভু্যদয় হয়েছে- তিনি জানেন কী করে বর্তমান যুগের আত্মরক্ষণ-উপযোগী শিক্ষা গ্ৰহণ করতে হবে, কী করে প্রতিকূল শক্তিকে নিরন্ত করতে হবে, বিদেশ থেকে যে সর্বগ্রাসী লোভের চক্রবাত্যা নিষ্ঠুর বলে এশিয়াকে চারি দিকে আঘাত করতে উদ্যত কী করে তাকে প্ৰতিহত করা সম্ভব । এশিয়ার যে অংশেই থাকি-না কেন এমন মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, তার চরিত্র আমাদের সকলেরই পক্ষে সম্পদ- বীরশক্তিতে তার স্বজাতির মধ্যে তিনি যে প্রাণসঞ্চার করেছেন তা দূর থেকেও আমাদের উদবোধনের সহায়তা করবে। তাতে সন্দেহ নেই । ভারতবর্ষের হয়ে, এশিয়ার হয়ে আমি তাকে অভিবাদন করি এবং র্তার করম্পর্শের স্মৃতি আমার দেশে বহন করে নিয়ে যাই । -বিচিত্রা । মাঘ ১৩৩৯, পৃ. ৯-১২ ৬৫৯ পৃষ্ঠার প্রথম অনুচ্ছেদের পরে আমার জন্মদিনে এখানকার বহুলোকের কাছ থেকে আমি যে বহু সমাদর পেয়েছি। একত্রে তার উত্তর দেবার জন্যে একটি কবিতা রচনা করেছিলুম। এখানকার মজলিস ভাঙবার পূর্বে সেটা আমি সকলকে শোনালুম । ইংরেজি তর্জমা-সমেত আমার কবিতাটি এইখানে পেশ করা গেল । তোমার কাননে যত আছে ফুল বিদেশী কবির জন্মদিনেরে মানি শুনালো তাহারে অভিনন্দনবাণী । ইরান, তোমার বীর সন্তান প্ৰণয়-অৰ্ঘ্য করিয়াছে দান আজি এ বিদেশী কবির জন্মদিনে, আপনার বলি নিয়েছে তাহারে চিনে । ইরান, তোমার সম্মানমালে নবগীেরব বহি নিজ ভালে সাৰ্থক হল কবির জন্মদিন । চিরকাল তারি স্বীকার করিয়া ঋণ তোমার ললাটে পরানু এ মোর শ্লোকইরানের জয় হোক ।* ১ দ্রষ্টব্য : ‘পারস্যে জন্মদিনে, পরিশেষ- রবীন্দ্র-রচনাবলী, পঞ্চদশ খণ্ড (সুলভ অষ্টম) ।