পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

was ब्रदीच-ब्रा5नादकी অবশেষে দেখা গেল নবজাগরণের আলোকরশ্মি । এই মহাদেশের অন্তরের মধ্যে একটা স্পন্দমান জীবনের কম্পন ক্রমেই যেন নিবিড় আত্মোপলজির মধ্যে সুপরিস্ফুট হয়ে উঠছে। এই পুণ্য মুহুর্তে আজ আমি কবি তোমাদের কাছে এসেছি। নবযুগের শুভ্ৰপ্ৰভাত ঘোষণা করতে, তোমাদের দিগন্তের অন্ধকার ভেদ করে যে আলোক ফুটে উঠেছে সেই আলোককে অভিনন্দন করতে- আমার জীবনের মহৎ সৌভাগ্য, আজ তোমাদের কাছে এলেম । জয় হোক ইরানের } ইরান-সম্রাট রেজা শা। পহিলবী দীর্ঘজীবী হোন ! পারস্য-সম্রাটের উত্তর জনাব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আমরা আপনার টেলিগ্রাম দেখেছি। আপনি পারস্য-প্রবাসে তৃপ্ত হয়েছেন এতে আমরা সুখী হয়েছি। আপনার এই প্রতিবেশী দেশটিতে যদি আরো কিছুকাল থাকতে পারতেন তো আরো খুশি হতেম এবং প্রাচ্যের প্রতি আপনার অন্তরের শ্ৰীতি আরো নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে পেয়ে আরো উপকৃত হতেম । আপনি আমাদের সম্বন্ধে যে সাধুবাদ করেছেন তা আমরা কখনো ভুলব না । Geri ri কবি-সংবর্ধনা উপলক্ষে কবির বক্ততা ইরাক-সম্রাটের সাদর নিমন্ত্রণে আজ যে আমি ইরাকের প্রাচীন ও বিরাট সভ্যতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সংস্পর্শে আসবার সুযোগ পেলেম সেজন্য সম্রাটকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি । আজ যখন এই প্ৰাচীন জাতি নবজন্ম লাভ করছে, যখন সৃষ্টির একটা অদম্য বেগ এর চিত্তকে সুস্পষ্ট আত্মপ্রকাশের গরিমা ও মুক্তির পরিপূর্ণ সার্থকতার মধ্যে পরিণত করে তুলছে, তখন এখানে উপস্থিত থাকতে পারাটা আমার জীবনের সত্যই একটা বড়ো অনুপ্রেরণার বিষয় । এখানকার বাতাসে আমি অনুভব করছি যৌবনের সেই উদ্দীপনা যা সমস্ত এশিয়া মহাদেশকে আজ নবযুগের নূতন প্রতিষ্ঠালাভের জনা ব্যাকুল করে তুলছে । আপনারা জানেন দুৰ্ভাগ্যবশত বয়স এবং স্বাস্থ্য দূরত্বের ব্যবধানকে অতিক্রম করতে বাধা দেয় ; তাই আপনাদের এই সাদর অভ্যর্থনার পরিবর্তে আপনারা আমার কাছে যতখানি আশা করেন হয়তো তার সবটুকু সফল করে তোলা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না । শুনলেম, আজকের দিনে আমাকে এই নিমন্ত্রণ প্ৰধানত বোগদাদের সাহিত্যিকদের তরফ থেকে । আমি যে দলের লোক বলে গৌরব অনুভব করি আমাকে সর্বসাধারণে তারাই যে প্রথমে অভিনন্দন করবেন। এটা স্বাভাবিক । আজ হৃদয়ে অপরিসীম আনন্দ বোধ করছি এই ভেবে যে, আমার কিছু কিছু রচনা আপনাদের ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং আপনাদের অন্তরে প্রবেশ লাভ করতে পেরেছে । সেই রচনাগুলির মধ্য দিয়ে আমি আগেই আপনাদের নিকট পরিচিত হয়েছি । এতে নূতন করে এই প্রমাণ হয় যে, সাহিত্যের ক্ষেত্রে জাতির প্রভেদ নেই, আমাদের ভােবরাজি অবাধে মেলামেশা করে পরম্পরের সহযোগিতায় এমন একটা পরিপূর্ণতা সৃষ্টি করতে পারে যার মধ্যে চিরন্তন মানবের কল্যাণ নিহিত আছে । ইতিহাস মানুষের প্রতি বিশেষ সদয় হয় নি । প্রবল জাতির লোলুপতা দুর্বল জাতিকে অসংখ্য বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে ; অন্যায়ক্ষুধাপরিতৃপ্তির জন্য দুর্বল জাতিকে শোষণ করতে তারা কুষ্ঠিত নয় । তাই আজ মনুষ্যত্ব পরস্পরের প্রতি সন্দেহে, দুঃখে, যন্ত্রণা-জর্জরিত ।