পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় (929 অসামািজস্যের গ্রানি আমাদের জীবনকে ছিক্সবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। পরস্পরের এই অস্বাভাবিক সম্বন্ধের বেদনা থেকে মনুষ্যত্বকে উদ্ধার করা, পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির জীবনযাত্রাকে উচ্চতর সুরে বেঁধে তোলা- সে তো আমাদেরই কাজ- আমরা যারা সাহিত্যের মন্দিরে আমাদের জীবন উৎসর্গ করেছি। আমরা যে দেশেরই সন্তান হই-না কেন আমাদের জীবনের এই এক উদ্দেশ্য । মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন ও মৈত্রীস্থাপনের এই সন্মিলিত চেষ্টার মধ্য দিয়ে আমাদের মনুষ্যত্বের পাকা ভিত গাখতে হবে । মানবজাতিকে আত্মঘাতী সংগ্রাম ও উন্মত্ত কুসংস্কারের বর্বরতা থেকে রক্ষা করবে। এই মিলনের উপনিবেশ । নূতন যুগের সূচনা করব আমরা- শুভবুদ্ধির যুগ, সহযোগিতার যুগ, যার মধ্যে ভাবের পরস্পর আদান-প্রদানের দ্বারা মনুষ্যত্বের বিপুল ঐশ্বৰ্য পরিস্ফুট হয়ে উঠবে। বন্ধুগণ, প্রাণের মধ্যে এই অদম্য আকাঙক্ষা নিয়ে আজ আমি আপনাদের মাঝখানে এসেছি। আমার প্রাণের এই গোপন কথাটি আজ। আপনাদের বলি, যে গোপন উদ্দেশ্য গভীরতম অন্তরে পোষণ করে আজ। আপনাদের দেশে বেড়াতে এসেছি। আমার আহবান এই— আসুন আমরা পরস্পর মিলিত হয়ে ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ৰবিদ্বেষের মূল ছিন্ন করে দিই, মানুষে মানুষে সহজ বিশ্বাসের নিত্য সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত করি । ইতিহাসের গৌরবের যুগে আপনাদের আরব সভ্যতা প্রাচ্য ও প্রতীচ্য জগতের অর্ধেকেরও বেশি জায়গা জুড়ে প্রাধান্য লাভ করেছিল ; আজও ভারতবর্ষের মুসলমান অধিবাসীদের আশ্রয় করে আমার দেশের মানসিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে আরব সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত আছে । আজ আরবসাগর পার হয়ে আসুক আপনাদের বাণী বিশ্বজনীন আদর্শ নিয়ে ; আপনাদের পুরোহিতরা আসুন তাদের বিশ্বাসের আলো নিয়ে ; জাতিভেদ, সম্প্রদায়ভেদ ও ধর্মভেদ প্রেমের মধ্যে অতিক্রম করে সকল শ্রেণীর মানুষকে আজ সখ্যের সহযোগিতায় মিলিয়ে দিন তারা । মানুষের মধ্যে যা-কিছু পবিত্র ও শাশ্বত তারই নামে আজ আমি আপনাদের কাছে আমার প্রার্থনা জানাই, আপনাদের মহানুভব ধর্মপ্রতিষ্ঠাতার নামে আজ আমি আপনাদের অনুরোধ করি— মানুষে মানুষে গ্ৰীতির আদর্শ, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আচার-ব্যবহারগত পার্থক্য নির্বিবাদে সহ্য করার আদর্শ, সহযোগিতার উপর সভ্য জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করবার আদর্শ প্রতিবেশীর প্রতি ভ্ৰাতৃভাবের আদর্শ আজ। আপনারা সকলের সম্মুখে প্রচার করুন। আমাদের ধর্মসমূহ আজ হিংস্র৷ ভ্ৰাতৃহত্যার বর্বরতায় কলুষিত, তারই বিষে ভারতের জাতীয় চেতনা জর্জরিত, স্বাধীনতার দিকে ভারতের অভিযান আজ বাধাপ্রাপ্ত। তাই আমার প্রার্থনা, তমসাচ্ছন্ন কুবুদ্ধিজনিত সমস্ত কুসংস্কার ও মোহ অতিক্রম করে আজ। আপনাদের কবিদের আপনাদের চিন্তাবীিরদের বাণী আমার দুর্ভাগা দেশে প্রেরণ করুন, তাকে দেখিয়ে দিন কল্যাণের পথ, দেখিয়ে দিন নৈতিক বিনষ্টি থেকে মুক্তিলাভের পথ । বন্ধুগণ, আজ। আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, স্বদেশের রাষ্ট্ৰীয় ও অর্থনৈতিক অভাব মোচন করাতেই জাতীয় আত্মপ্রকাশের সকল দায়িত্ব শেষ হয় না- দেশকালের সীমানা অতিক্রম করে আপনাদের বাণী পৌছনো চাই সেইখানে যেখানে মনুষ্যত্বের নৈতিক সমস্যাগুলি আপনাদের বিচার ও বিবেচনার জন্য অপেক্ষা করে আছে । প্রয়োজন হলে দ্বিধা না করেই সত্যবাক্য শোনাতে হবে । আজ সেই মহাপ্রয়োজন সমাগত । আপনাদের সমধমী ভারতবাসীরা আজ প্রতীক্ষা করে আছে। আপনাদের কাছে থেকেই নূতন বাণী শুনবে, বীর্যের বাণী, মিলনের বাণী, সকল ধর্মকে কল্যাণের যোগে শ্রদ্ধা করবার মানবোচিত শুভবুদ্ধির বাণী । -विद्धिा | ● s७७•,° ७०२-७०१