পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৪ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী গভীর নিশাস। ফেলে চুপটি করে ভাবে, এমন করে আর কতদিন যাবে । দূরদেশে তার আপনি জনা, নিজেরই ঝঞ্জাটে তাদের বেলা কাটে । তারা এখন আর কি মনে রাখে। এতবড়ো অদরকারি তাকে । চোখে এখন কম দেখে সে, ঝাপসা যে তার মন, ভগ্নশেষের সংসারে তার শুকনো ফুলের বন । স্টেশন-মুখে গেল চলে পিছনে গ্রাম ফেলে, রাত থাকতে, পাছে দেখে পাড়ার মেয়ে ছেলে । দূরে গিয়ে, বাশবাগানের বিজন গলি বেয়ে পথের ধারে বসে পড়ে, শূন্যে থাকে চেয়ে । কাঠের সিঙ্গি ছোটো কাঠের সিঙ্গি আমার ছিল ছেলেবেলায়, সেটা নিয়ে গর্ব ছিল বীরপুরুষি খেলায় । গলায় বাধা রাঙা ফিতের দড়ি, চিনেমাটির ব্যাঙ বেড়াত পিঠের উপর চড়ি । ব্যাঙটা যখন পড়ে যেত ধমকে দিতেম কষে, কাঠের সিঙ্গি ভয়ে পড়ত বসে । গা গা করে উঠছে বুঝি, যেমনি হত মনে, “চুপ করো” যেই ধমকানো আর চমকাত সেইখানে । আমার রাজ্যে আর যা থাকুক সিংহভয়ের কোনো সম্ভাবনা ছিল না কখখনো । মাংস বলে মাটির ঢেলা দিতেম ভাড়ের পরে, আপত্তি ও করত না তার তরে । বুঝিয়ে দিতেম, গোপাল যেমন সুবোধ সবার চেয়ে তেমনি সুবোধ হওয়া তো চাই যা দেব তাই খেয়ে । ইতিহাসে এমন শাসন করে নি। কেউ পাঠ, দিবানিশি কাঠের সিঙ্গি ভয়েই ছিল কাঠ । খুন্দি কাইত মিছিমিছি, “ভয় করছে, দাদা ।” আমি বলতেম, “আমি আছি, থামাও তোমার কাদাযদি তোমায় খেয়েই ফেলে এমনি দেব মার দু চক্ষে ও দেখবে অন্ধকার ।” মেজদিদি আর ছোড়দিদিদের খেলা পুতুল নিয়ে, কথায় কথায় দিচ্ছে তাদের বিয়ে ।