পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨૭ রবীন্দ্র-রচনাবলী নৃপ তাহার ছোটো বোনকে সংযত করা অসাধ্য দেখিয়া তাহাকে টানিয়া লইয়া চলিল। নীক চলিতে চলিতে দ্বারের নিকট হইতে মুখ ফিরাইয়া কহিল, “এলে খবর দিয়ে মুখুজ্যেমশায়, ফাকি দিয়ে না। দেখছ তো সেজদিদি কী রকম চঞ্চল হয়ে উঠেছে।” সহাস্ত সক্ষেহে দুই বোনকে নিরীক্ষণ করিয়া শৈল কহিল, "মুখুজ্যেমশায় আমি ঠাট্টা করছিনে— আমি চিরকুমার সভার সভ্য হব। কিন্তু আমার সঙ্গে পরিচিত এক জন কাউকে চাই তো । তোমার বুঝি আর সভ্য হবার জো নেই ?” অক্ষয় । না, আমি পাপ করেছি। তোমার দিদি আমার তপস্তা ভঙ্গ করে আমাকে স্বৰ্গ হতে বঞ্চিত করেছেন । শৈল । তা হলে রসিকদাদাকে ধরতে হচ্ছে। তিনি তো কোনো সভার সভ্য না হয়েও চিরকুমারব্রত রক্ষণ করেছেন । অক্ষয় । সভ্য হলেই এই বুড়োবয়সে ব্রতটি খোওয়াবেন। ইলিশ মাছ আমনি দিব্যি থাকে, ধরলেই মারা যায়— প্রতিজ্ঞাও ঠিক তাই, তাকে বাধলেই তার সর্বনাশ । এমন সময়, সম্মুখের মাথায় টাক, পাকা গোফ, গৌরবর্ণ, দীর্ঘাকৃতি, রসিকদাদা আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অক্ষয় তাহাকে তাড়া করিয়া গেল ; কহিল, “ওরে পাবও, ভগু, অকালকুষ্মাণ্ড!” রসিক প্রসারিত দুই হস্তে তাহাকে সম্বরণ করিয়া কহিলেন, “কেন হে, মত্তমম্বর কুঞ্জকুঞ্জর পুঞ্জ-অঞ্জনবর্ণ!” অক্ষয়। তুমি আমার খালীপুষ্পবনে দাবানল আনতে চাও? শৈল । রসিকদাদা, তোমারই বা তাতে কী লাভ ? রসিক। ভাই, সইতে পারলুম না, কী করি! বছরে বছরেই তোর বোনদের বয়স বাড়ছে, বড়োম আমারই দোষ দেন কেন ? বলেন, দু-বেলা বলে বসে কেবল খাচ্ছ, মেয়েদের জন্যে দুটো বর দেখে দিতে পার না! আচ্ছা ভাই, আমি না খেতে রাজি আছি, তা হলেই বর জুটবে— না তোর বোনদের বয়স কমতে থাকবে ? এ দিকে যে দুটির বর জুটছে না তারা তো দিব্যি খাচ্ছেন-দাচ্ছেন। শৈল ভাই, কুমারসম্ভবে পড়েছিস, মনে আছে তো ?— স্বয়ংবিশীর্ণক্রমপর্ণবৃত্তিত পরাহি কাষ্ঠী তপসন্তয়া পুনঃ । তদপ্যপাকীর্ণমতঃ প্রিয়ংবদাং বদস্ত্যপর্ণেতি চ তাং পুরাবিদ ।