পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহার পর অক্ষয় বুড়ো আঙুল দিয়া মৃত্যুঞ্জয়ের গা টিপিয়া মৃদ্ধস্বরে কহিলেন, “বিয়ার না শেরি ?” । 嘲 মৃত্যুঞ্জয় লজ্জিত হইয়৷ মুখ বাকাইল। দারুকেশ্বর সঙ্গীটিকে বদরসিক বলিয়া মনে মনে গালি দিয়া কহিল, “হুইস্কির বন্দোবস্ত নেই বুঝি ?” অক্ষয় তাহার পিঠ চাপড়াইয়া কহিলেন, “নেই তো কী ? বেঁচে আছি কী করে ?” বলিয়া যাত্রার স্বরে গাহিয়া উঠিলেন— “অভয় দাও তো বলি আমার wish কী, একটি ছটাক সোডার জলে পাকি তিন পোয়া হুইস্কি !” ক্ষীণপ্রকৃতি মৃত্যুঞ্জয়ও প্রাণপণে হাস্ত করা কর্তব্য বোধ করিল এবং দারুকেশ্বর ফস করিয়া একটা বই টানিয়া লইয়। টপাটপ বাজাইতে আরম্ভ করিল। অক্ষয় দু-লাইন গাহিয়৷ থামিবামাত্র দারুকেশ্বর বলিল, “দাদা, ওটা শেষ করে ফেলো!” বলিয়া নিজেই ধরিল, “অভয় দাও তো বলি আমার wish কী।” মৃত্যুঞ্জয় মনে মনে তাহাকে বাহাদুরি দিতে লাগিল । অক্ষয় মৃত্যুঞ্জয়কে ঠেলা দিয়া কহিলেন, "ধরে না হে, তুমিও ধরে!” সলজ্জ মৃত্যুঞ্জয় নিজের প্রতিপত্তি রক্ষার জন্ত মৃদুস্বরে যোগ দিল – অক্ষয় ডেস্ক চাপড়াইয়া বাজাইতে লাগিলেন। এক জায়গায় হঠাৎ থামিয়া গম্ভীর হইয়া কহিলেন, “ই, ই, আসল কথাটা জিজ্ঞাসা করা হয়নি। এ দিকে তো সব ঠিক— এখন আপনারা কী হলে রাজি হন ?” দারুকেশ্বর কহিল, “আমাদের বিলেতে পাঠাতে হবে।” অক্ষয় কহিলেন, “সে তো হবেই । তার না কাটলে কি শু্যাম্পেনের ছিপি খোলে ? দেশে আপনাদের মতো লোকের বিস্তেবুদ্ধি চাপ থাকে, বাধন কাটলেই একেবারে নাকে মুখে চোখে উছলে উঠবে।” দারুকেশ্বর অত্যন্ত খুশি হইয়া অক্ষয়ের হাত চাপিয়া ধরিল ; কহিল, “দাদা, এইটে তোমাকে করে দিতেই হচ্ছে । বুঝলে ?” অক্ষয় কহিলেন, “সে কিছুই শক্ত নয়। কিন্তু ব্যাপটাইজ আজই তো হবেন ?” দারুকেশ্বর ভাবিল, ঠাট্টাটা বোঝা যাইতেছে না। হাসিতে হাসিতে জিজ্ঞাসা করিল, “সেটা কিরকম ?” অক্ষয় কিঞ্চিং বিস্ময়ের ভাবে কহিলেন, “কেন, কথাই তো আছে, রেভারেও, বিশ্বাস আজ রাত্রেই আসছেন। ব্যাপটিজম না হলে তো ক্রিস্টান মতে বিবাহ হতে পারে না ।” 战