পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রজাপতির নির্বন্ধ ২৩৭ অক্ষয়। তা তো বটেই, ওঁর সকলেই পূজ্য। কলিমদি সেলাম করিয়া চলিয়া গেল। অক্ষয় কিঞ্চিৎ গলা চড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “মশায়রা কি তা হলে আজ রাত্রেই ক্রিস্টান হতে চান ?” থানার আশ্বাসে প্রফুল্লচিত্ত দারুকেশ্বর কহিল, “আমার তে কথাই আছে, শুভস্ত শীঘ্ৰং । আজই ক্রিস্টান হব, এখনই ক্রিশচীন হব, ক্রিশচীন হয়ে তবে অস্ত কথা । মশায়, আর ওই পুই শাক কলাইয়ের ভাল খেয়ে প্রাণ বঁাচে না । আমুন আপনার পান্দ্রি ডেকে।” বলিয়া পুনশ্চ উচ্চস্বরে গান ধরিল— “যাও ঠাকুর চৈতন চুটকি নিয়া, এস দাড়ি নাড়ি কলিমন্দি মিঞা !” চাকর আসিয়া অক্ষয়ের কানে কানে কহিল, “মাঠাকরুন এক বার ডাকছেন।” অক্ষয় উঠিয় দ্বারের অন্তরালে গেলে জগত্তারিণী কহিলেন, “এ কী ! কাগুটা কী ?” অক্ষয় গম্ভীরমুখে কহিলেন, “ম, সে-সব পরে হবে, এখন ওরা হুইস্কি চাচ্ছে, কী করি ? তোমার পায়ে মালিশ করবার জন্তে সেই-ষে ব্রাত্তি এসেছিল, তার কি কিছু বাকি আছে ?” জগত্তারিণী হতবুদ্ধি হইয়া কহিলেন, “বল কী বাছ ? ব্রাত্তি খেতে দেবে ?” অক্ষয় কহিলেন, "কী করব মা, শুনেইছ তো, ওর মধ্যে একটি ছেলে আছে যার জল খেলেই সন্ধি হয়, মদ না খেলে আর একটির মুখে কথাই বের হয় না।” জগত্তারিণী কহিলেন, “ক্রিশচীন হবার কথা কী বলছে ওরা ?” অক্ষয় কহিলেন, “ওরা বলছে হিছু হয়ে খাওয়াদাওয়ার বড়ো অস্থবিধে, পুইশাক কলাইয়ের ডাল খেয়ে ওদের অস্থখ করে!” . জগত্তারিণী অবাক হইয়া কহিলেন, “তাই বলে কি ওদের আজ রাতেই মুর্গি থাইয়ে ক্রিস্টান করবে নাকি ?” অক্ষয় কহিলেন, “তা, মা, ওরা যদি রাগ করে চলে যায় তা হলে দুটি পাত্র এখনই ইতিছাড়া হবে । তাই ওরা ষা বলছে তাই শুনতে হচ্ছে, আমাকে স্থদ্ধ মদ ধরাবে দেখছি।” পুরবাল কহিলেন, “বিদায় করে, বিদায় করো, এখনই বিদায় করে।” জগত্তারিণী ব্যস্ত হইয়া কছিলেন, “বাবা, এখানে মূৰ্গি খাওয়া-টাওয়া হবে না, তুমি ওদের বিদায় করে দাও। আমার ঘাট হয়েছিল জামি রসিককাকাকে পাত্র সন্ধান করতে দিয়েছিলুম। উীর দ্বারা যদি কোনো কাজ পাওয়া যায়।” রমণীগণের প্রস্থান। অক্ষয় ঘরে জাসিয়া দেখেন, মৃত্যুঞ্জয় পলায়নের উপক্রম