পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՊe রবীন্দ্র-রচনাবলী অষ্টম পরিচ্ছেদ নৃপবালা। আজকাল তুই মাঝে মাঝে কেন অমন গম্ভীর হচ্ছিস বল তো নীরু। নীরবালা। আমাদের বাড়ির যত কিছু গাম্ভীর্ষ সব বুঝি তোর একলার ? আমার খুশি আমি গম্ভীর হব। f নৃপবালা। তুই কী ভাবছিস আমি বেশ জানি। নীরবালা । তোর অত আন্দাজ করবার দরকার কী ভাই ? এখন তোর নিজের ভাবনা ভাববার সময় হয়েছে। নৃপ নীরুর গলা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “তুই ভাবছিল, মা গে৷ মা, আমরা কী জঞ্জাল। আমাদের বিদায় করে দিতেও এত ভাবনা, এত ঝঙ্কাট ।” নীরবালা । তা, আমরা তো ভাই ফেলে দেবার জিনিস নয় যে অমনি ছেড়ে দিলেই হল। আমাদের জন্তে যে এতটা হাঙ্গাম হচ্ছে সে তো গৌরবের কথা । কুমারসম্ভবে তো পড়েছিস গৌরীর বিয়ের জন্য একটি আস্ত দেবতা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। যদি কোনো কবির কানে উঠে তা হলে আমাদের বিবাহেরও একটা বর্ণনা বেরিয়ে যাবে। নৃপবালা। না ভাই, আমার ভারি লজ্জা করছে। নীরবালা। আর, আমার বুঝি লজ্জা করছে না? আমি বুঝি বেহায় ? কিন্তু কী করবি বল ? ইস্কুলে যেদিন প্রাইজ নিতে গিয়েছিলুম লজ্জা করেছিল, আবার তার পর বছরেও প্রাইজ নেবার জন্তে রাত জেগে পড়া মুখস্থ করেছিলেম। লজ্জাও করে প্রাইজও ছাড়ি নে, আমার এই স্বভাব। নৃপবালা। আচ্ছা নীক, এবারে যে প্রাইজটার কথা চলছে সেটার জন্তে তুই কি খুব ব্যস্ত হয়েছিস ? নীরবালা। কোনটা বল দেখি। চিরকুমার-সভার দুটাে সভ্য। নৃপবালা। যেই হোক-না কেন, তুই তো বুঝতে পারছিল। নীরবালা। তা ভাই, সত্যি কথা বলব ? (নৃপর গলা জড়াইয়া কানে কামে ) শুনেছি কুমারসভার দুটি সত্যের মধ্যে খুব ভাব, আমরা যদি দুজনে দুই বন্ধুর হাতে পড়ি তা হলে বিয়ে হয়েও আমাদের ছাড়াছাড়ি হবে না— নইলে আমরা কে কোথায় চলে যাব তার ঠিক নেই। তাই তো সেই যুগল বেতার জন্তে এত পূজোর আয়োজন করেছি ভাই। জোড়হন্তে মনে মনে বলছি, হে কুমারসভার