রবীন্দ্র-রচনাবলী এবং তার মধ্যে কেউ ভগবানের স্থানাভিষিক্ত নয়। মানুষের আত্মিক স্বষ্টি কেন, প্রাকৃতিক স্বষ্টিতেও আদিকাল থেকে মূল আদর্শের সঙ্গে বাহ প্রকাশের সাংঘাতিক দ্বন্দ্ব দেখতে পাওয়া গেছে। আঙ্গারিক যুগের শ্রীহীন গাছগুলো কেন টিকতে পারল না। আজ পরবর্তী গাছগুলিতে সমস্ত পৃথিবীকে দিয়েছে শোভা । কোন শিল্পী রচনার সূত্রপাতে প্রথম ব্যর্থ হয়েছিল, মাথা নেড়েছিল, হাতের কাজ নিষ্ঠুর ভাবে মুছতে মুছতে সংস্কার সাধন করেছে– একথা যখন ভাবি তখন স্থষ্টির ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে ছুই সত্তার মিলনচেষ্টা স্পষ্ট দেখতে পাই । সেই চেষ্টা কী নিষ্ঠুর ভাবে নিজেকে জয়যুক্ত করতে চায়, মানুষের ইতিহাসে বারংবার তার প্রমাণ পাওয়া যায় ; আজ তার সেই আত্মঘাতী প্রমাণ যেমন প্রকট হয়েছে এমন আর কখনো হয়নি। চিত্রার প্রথম কবিতায় তার একটি সূচনায় বলা হয়েছে— জগতের মাঝে কত বিচিত্ৰ তুমি হে তুমি বিচিত্ররূপিণী । তার পর অাছে— অন্তরমাঝে তুমি শুধু এক একাকী তুমি অস্তরবাসিনী । আজ ব্যাখ্যা করে যে কথা বলবার চেষ্টা করছি সেই কথাটাই এই কবিতার মধ্যে ফুটতে চেয়েছিল। বাইরে যার প্রকাশ বাস্তবে সে বহু, অন্তরে যার প্রকাশ সে একা। এই দুই ধারার প্রবাহেই কাব্য সম্পূর্ণ হয়। ‘এবার ফিরাও মোরে কবিতায় কর্মজীবনের সেই বিচিত্রের ডাক পড়েছে। ‘আবেদন কবিতায় ঠিক তার উলটাে কথা। কবি বলেছে, ‘কর্মক্ষেত্রে, যেখানে কার্যক্ষেত্রের জনতায় কর্মীর কর্ম করছে, সেখানে আমার স্থান নয়। আমার স্থান সৌন্দর্যের সাধকরূপে একা তোমার কাছে। জীবনের দুই ভিন্ন মহলে কবির এই ভিন্ন ভিন্ন কথা । জগতে বিচিত্ররূপিণী আর অস্তরে একাকিনী কবির কাছে এ দুইই সত্য, আকাশ এবং ভূতলকে নিয়ে ধরণী যেমন সত্য। ব্রাহ্মণ পুরাতন ভূত্য হই
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০
অবয়ব