পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'©ፃ• রবীন্দ্র-রচনাবলী আসিয়া উপবেশন করিব এবং নিশৰে তাহার পদধূলি মাথা তুলিয়া শুদ্ধভাবে গৃহে আসিয়া চিন্তা করিব। 蟲 আজ নববর্ষে এই শূন্ত প্রান্তরের মধ্যে ভারতবর্ষের আর-একটি ভাব আমরা হৃদরের মধ্যে গ্রহণ করিব। তাহা ভারতবর্ষের একাকি। এই একাকিত্বের অধিকার বৃহৎ অধিকার। ইহা উপার্জন করিতে হয়। ইহা লাভ করা, রক্ষা করা দুরূহ। পিতামহগণ এই একাকিত্ব ভারতবর্ষকে দান করিয়া গেছেন। মহাভারত-রামায়ণের স্তায় ইহা অামাদের জাতীয় সম্পত্তি। সকল দেশেই এক জন অচেনা বিদেশী পথিক অপূর্ব বেশভূষায় জাসিয়া উপস্থিত হইলে, স্থানীয় লোকের কৌতুহল যেন উন্মত্ত হইয় উঠে— তাহাকে ঘিরিয়া, তাহাকে প্রশ্ন করিয়া, আঘাত করিয়া, সন্দেহ করিয়া বিব্রত করিয়া তোলে। ভারতবাসী অতি সহজে তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করে— তাহার দ্বারা আহত হয় না, এবং তাহাকে আঘাত করে না। চৈনিক পরিব্রাজক ফাহিয়ান, হিয়োনথসাং, যেমন অনায়াসে আত্মীয়ের স্থায় ভারত পরিভ্রমণ করিয়া গিয়াছিলেন, য়ুরোপে কখনো সেরূপ পারিতেন না। ধর্মের ঐক্য বাহিরে পরিদৃশুমান নহে– যেখানে ভাষা, আকৃতি, বেশভূষা, সমস্তই স্বতন্ত্র সেখানে কৌতুহলের নিষ্ঠুর আক্রমণকে পদে পদে অতিক্রম করিয়া চলা অসাধ্য। কিন্তু ভারতবর্ষীয় একাকী আত্মসমাহিত, সে নিজের চারি দিকে একটি চিরস্থায়ী নির্জনত বহন করিয়া চলে— সেইজন্ত কেহ তাহার একেবারে গায়ের উপর আসিয়া পড়ে না। অপরিচিত বিদেশী তাহার পার্শ্ব দিয়া চলিয়া যাইবার যথেষ্ট স্থান পায়। যাহারা সর্বদাই ভিড় করিয়া, দল বাধিয়া, রাস্ত জুড়িয়া বসিয়া থাকে তাহাদিগকে আঘাত না করিয়া এবং তাঁহাদের কাছ হইতে আঘাত না পাইয়া নূতন লোকের চলিবার সম্ভাবনা নাই। তাহাকে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়া, সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া, তবে এক পা অগ্রসর হইতে হয়। কিন্তু ভারতবর্ষীয় যেখানে থাকে, সেখানে কোনো বাধা রচনা করে না— তাহার স্থানের টানাটানি নাই, তাহার একাকিত্বের অবকাশ কেহ কীড়িয়া লইতে পারে না। গ্রীক হউক, আরব হউক, চৈন হউক, লে জঙ্গলের স্থায় কাহাকেও জাটক করে না ; বনস্পতির স্তায় নিজের তলদেশে চারি দিকে অবাধ স্থান রাখিয়া দেয় ; জাশুয় লইলে ছায়া দেয়, চলিয়া গেলে কোনো কথা বলে না। এই একাকিত্বের মহত্ব বাহার চিত্ত আকর্ষণ করে না লে ভারতবর্ষকে ঠিকমতো চিনিতে পরিবে না । বহুশতাব্দী ধরিয়া প্রবল বিদেশী উন্মত্ত বরাহের স্থায় ভারতবর্ধকে এক প্রান্ত হইতে আর-এক প্রাপ্ত পর্যন্ত দপ্তম্বারা বিীর্ণ করিয়া ফিরিয়াছিল, তখনে ভারতবর্ষ আপন বিস্তীর্ণ একাকিম্বারা পরিরক্ষিত ছিল— কেহই তাহান ।