পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

938 - রবীন্দ্র-রচনাবলী এ কথা জানি কোনো সম্প্রদায়ের প্রত্যেক লোকই কোনো কালে আপনার ধর্মকে বিশুদ্ধভাবে রক্ষা করে না, অনেকে খলিত হয়। অনেকে ব্রাহ্মণ হইয়াও ক্ষত্রিয় ও বৈশ্বের ন্যায় আচরণ করিয়াছে, পুরাণে এরূপ উদাহরণ দেখা যায়। কিন্তু তৰু যদি সম্প্রদায়ের মধ্যে আদর্শ সজীব থাকে, ধর্মপালনের চেষ্টা থাকে, কেহ আগে যাক কেহ পিছাইয়া পড়ুক, কিন্তু সেই পথের পথিক যদি থাকে, যদি এই আদশের প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত অনেকের মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায়, তবে সেই চেষ্টার দ্বারা, সেই সাধনার দ্বারা, সেই সফলতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দ্বারাই সমস্ত সম্প্রদায় সার্থক হইয়া থাকে । আমাদের আধুনিক ব্রাহ্মণসমাজে সেই আদর্শই নাই। সেই জন্তই ব্রাহ্মণের ছেলে ইংরাজি শিখিলেই ইংরাজি কেতা ধরে— পিতা তাহাতে অসন্তুষ্ট হন না। কেন এম. এ-পাস-করা মুখোপাধ্যায়, বিজ্ঞানবিং চট্টোপাধ্যায়, যে বিষ্ঠা পাইয়াছেন তাহা ছাত্রকে ঘরে ডাকিয়া আসন হইয়া বসিয়া বিতরণ করিতে পারেন না ? সমাজকে শিক্ষাঋণে ঋণী করিবার গৌরব হইতে কেন তাহারা নিজেকে ও ব্রাহ্মণসমাজকে বঞ্চিত করেন ? তাহারা জিজ্ঞাসা করিবেন, খাইব কী? যদি কালিয়া-পোলোয় না খাইলেও চলে, তবে নিশ্চয়ই সমাজ আপনি আসিয়া যাচিয়া খাওয়াইয়া যাইবে । তাহাদের নহিলে সমাজের চলিবে না, পায়ে ধরিয়া সমাজ তাহাদিগকে রক্ষা করিবে। আজ তাহার বেতনের জন্ত হাত পাতেন, সেই জন্ত সমাজ রসিদ লইয়া টিপিয়া টিপিয়া উtহাদিগকে বেতন দেয় ও কড়ায় গগুীয় তাহীদের কাছ হইতে কাজ আদায় করিয়া লয় । তাহারাও কলের মতো বাধা নিয়মে কাজ করেন ; শ্রদ্ধা দেনও না, শ্রদ্ধা পানও না— উপরন্তু মাঝে মাঝে সাহেবের পাছক পৃষ্ঠে বহন করা -রূপ অত্যন্ত তুচ্ছ ঘটনার স্ববিখ্যাত উপলক্ষ্য হইয়া উঠেন। * আমাদের সমাজে ব্রাহ্মণের কাজ পুনরায় আরম্ভ হইবে, এ সম্ভাবনাকে আমি স্বপূরপরাহত মনে করি না এবং এই আশাকে আমি লঘুভাবে মন হইতে অপসারিত করিতে পারি না। ভারতবর্ষের চিরকালের প্রকৃতি তাহার ক্ষণকালের বিকৃতিকে সংশোধন করিয়া লইবেই। এই পুনর্জাগ্রত ব্রাহ্মণসমাজের কাজে অব্রাহ্মণ অনেকেও ৰোগ দিবেন। প্রাচীন ভারতেও ব্রাহ্মণেতর অনেকে ব্রাহ্মণের ব্রত গ্রহণ করিয়া জ্ঞানচর্চা ও উপদেষ্টার কাজ করিয়াছেন, ব্রাহ্মণও তাহাজের কাছে শিক্ষালাভ করিয়াছেন, এমন দৃষ্টান্ডের আতাৰ बांहे ।