পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२० রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রত্যেক জাতির যেমন একটি জাতিধর্ম অাছে তেমনি জাতিধর্মের অতীত একটি শ্রেষ্ঠ ধর্ম আছে, তাহ মানবসাধারণের। আমাদের দেশে বর্ণাশ্রমধর্মে যখন সেই উচ্চতর ধর্মকে আঘাত করিল তখন ধর্ম তাহাকে আঘাত করিল—ধর্ম এব হতে হস্তি ধর্মে রক্ষতি রক্ষিতঃ । 轉 এক সময় আর্যসভ্যতা আত্মরক্ষার জন্য ব্রাহ্মণ-পূত্রে দুর্লঙ্ঘ ব্যবধান রচনা করিয়াছিল। কিন্তু ক্রমে সেই ব্যবধান বর্ণাশ্রমধর্মের উচ্চতর ধর্মকে পীড়িত করিল। বর্ণাশ্রম আপনাকে রক্ষা করিবার জন্য চেষ্টা করিল, কিন্তু ধর্মকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করিল না। সে যখন উচ্চ অঙ্গের মহাত্মচৰ্চা হইতে শূত্রকে একেবারে বঞ্চিত করিল তখন ধর্ম তাহার প্রতিশোধ লইল। তখন ব্রাহ্মণ্য আপন জ্ঞানধর্ম লইয়া পূর্বের মতে আর অগ্রসর হইতে পারিল না। অজ্ঞানজড় শূত্রসম্প্রদায় সমাজকে গুরুভারে আকৃষ্ট করিয়া নীচের দিকে টানিয়া রাখিল। শূন্ত্রকে ব্রাহ্মণ উপরে উঠতে দেয় নাই, কিন্তু শূত্র ব্রাহ্মণকে নীচে নামাইল। আজিও ভারতে ব্রাহ্মণপ্রধান বর্ণাশ্রম থাকা সত্বেও শূত্রের সংস্কারে, নিকৃষ্ট অধিকারীর অজ্ঞানতায়, ব্রাহ্মণসমাজ পর্যন্ত আচ্ছন্ন আবিষ্ট । ইংরাজের আগমনে যখন জ্ঞানের বন্ধনমুক্তি হইল, যখন সকল মচুন্যই মচুন্যত্বলাভের অধিকারী হইল, তখনই ব্রাহ্মণধর্মের মূৰ্ছাপগমের লক্ষণ প্রকাশ পাইল। আজ ব্রাহ্মণ শূত্রে সকলে মিলিয়া হিন্দুজাতির অন্তর্নিহিত অাদর্শের বিশুদ্ধ মূর্তি দেখিবার জন্ত সচেষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। শূত্রেরা আজ জাগিতেছে বলিয়াই ব্রাহ্মণধৰ্মও জাগিবার উপক্রম করিতেছে। যাহাই হউক, আমাদের বর্ণাশ্রমধর্মের সংকীর্ণতা নিত্যধর্মকে নানা স্থানে খর্ব করিয়াছিল বলিয়াই তাহা উন্নতির দিকে না গিয়া বিকৃতির পথেই গেল। যুরোপীয় সভ্যতার মূলভিত্তি রাষ্ট্রীয় স্বার্থ যদি এত অধিক স্ফীতিলাভ করে যে, ধর্মের সীমাকে অতিক্রম করিতে থাকে, তবে বিনাশের ছিত্র দেখা দিবে এবং সেই পথে শনি প্রবেশ করিবে । স্বার্থের প্রকৃতিই বিরোধ। যুরোপীয় সভ্যতার সীমায় সীমায় সেই বিরোধ উত্তরোত্তর কন্টকিত হইয়া উঠিতেছে। পৃথিবী লইয়া ঠেলাঠেলি কাড়াকড়ি পড়িৰে, তাহার পূর্বসূচনা দেখা যাইতেছে। ইহাও দেখিতেছি, স্কুরোপের এই রাষ্ট্ৰীয় স্বার্থপরতা ধর্মকে প্রকাশুভাবে অবজ্ঞা করিতে আরম্ভ করিয়াছে। ‘জোর ষার মুলুক তার এ নীতি স্বীকার করিতে জার লজ্জা বোধ করিতেছে না।