চিত্র স্বার্থোদ্ধত অবিচার ; সংকুচিত ভীত ক্রীতদাস লুকাইছে ছদ্মবেশে । ওই যে দাড়ায়ে নতশির মূক সবে— মান মুখে লেখা শুধু শত শতাব্দীর বেদনার করুণ কাহিনী ; স্কন্ধে যত চাপে ভার বহি চলে মন্দগতি, যতক্ষণ থাকে প্রাণ তার— তার পরে সস্তানেরে দিয়ে যায় বংশ বংশ ধরি, নাহি ভংসে অদৃষ্টেরে, নাহি নিন্দে দেবতারে স্বরি, মানবেরে নাহি দেয় দোষ, নাহি জানে অভিমান, শুধু দুটি অন্ন খুটি কোনোমতে কষ্টক্লিষ্ট প্রাণ রেখে দেয় বঁাচাইয়া। সে অল্প যখন কেহ কাড়ে, সে প্রাণে আঘাত দেয় গর্বান্ধ নিষ্ঠুর অত্যাচারে, নাহি জানে কার স্বারে দাড়াইবে বিচারের আশে-— দরিত্রের ভগবানে বারেক ভাকিয়া দীর্ঘশ্বাসে মরে সে নীরবে। এই সব মূঢ় মান মুক মুখে দিতে হবে ভাষা— এই সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা— ডাকিয়া বলিতে হবে— মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাড়াও দেখি সবে, যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে, যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে ; যখনি দাড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার, তখনি সে পথকুকুরের মতো সংকোচে সত্ৰাসে যাবে মিশে ; দেবতা বিমুখ তারে, কেহ নাহি সহায় তাহার, মুখে করে আস্ফালন, জানে সে হীনতা আপনার মনে মনে । কবি, তবে উঠে এস— যদি থাকে প্রাণ তবে তাই লহ সাথে, তবে তাই করো জাজি দান। বড়ো দুঃখ, বড়ো ব্যথা– সমূখেতে কষ্টের সংসার । বড়োই দরিত্র, শূন্ত, বড়ে ক্ষুত্র, বদ্ধ, অন্ধকার। অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু, ।
পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭
অবয়ব