পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Woo. রবীন্দ্র-রচনাবলী চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জল পরমায়ু, সাহসবিস্তৃত বক্ষপট। এ দৈন্তমবারে, কবি, এক বার নিয়ে এস স্বর্গ হতে বিশ্বাসের ছবি । এবার ফিরাও মোরে, লয়ে যাও সংসারের তীরে হে কল্পনে, রঙ্গময়ী। দুলায়ো না সমীরে সমীরে তরঙ্গে তরঙ্গে আর, ভূলায়ো না মোহিনী মায়ায়। বিজন বিষাদঘন অন্তরের নিকুঞ্জচ্ছায়ায় রেখো না বসায়ে আর । দিন যায়, সন্ধ্যা হয়ে আসে । অন্ধকারে ঢাকে দিশি, নিরাশ্বাস উদাস বাতাসে নিঃশ্বসিয়া কেঁদে ওঠে বন । বাহিরিতু হেথা হতে উন্মুক্ত অম্বরতলে, ধূসরপ্রসর রাজপথে জনতার মাঝখানে । কোথা যাও, পান্থ, কোথা ঘাও— আমি নহি পরিচিত, মোর পানে ফিরিয়া তাকাও । বলো মোরে নাম তব, আমারে কোরো না অবিশ্বাস । স্বাক্টছাড়া স্বষ্টিমাঝে বহুকাল করিয়াছি বাস সঙ্গিহীন রাত্রিদিন ; তাই মোর অপরূপ বেশ, আচার নূতনতর, তাই মোর চক্ষে স্বপ্নাবেশ বক্ষে জলে ক্ষুধানল। যেদিন জগতে চলে আসি, কোন মা আমারে দিলি শুধু এই খেলাবার বঁাশি। বাজাতে বাজাতে তাই মুগ্ধ হয়ে আপনার স্বরে দীর্ঘদিন দীর্ঘরাত্রি চলে গেন্থ একান্ত স্বৰূরে * ছাড়ায়ে সংসারসীম। সে বঁাশিতে শিখেছি যে স্বর তাহারি উল্লাসে যদি গীতশূন্ত অবসাদপুর ধ্বনিয়া তুলিতে পারি, মৃত্যুঞ্জয়ী অাশার সংগীতে কর্মহীন জীবনের এক প্রাস্ত পারি তরঙ্গিতে শুধু মুহূর্তের তরে, দুঃখ যদি পায় তার ভাষা, সুপ্তি হতে জেগে ওঠে অন্তরের গভীর পিপাসা স্বর্গের অমৃত লাগি– তবে ধন্ত হবে মোর গান, শত শত অসন্তোষ মহাগীতে লভিবে নির্বাণ ।