ভারতবর্ষ । sve আদর্শই যাহাকে আকর্ষণ করুক-না কেন, সেই মুক্তিপথে যাইবার উপায়গুলির মধ্যে একটি ঐক্য আছে। সে ঐক্য আর কিছু নয়, সমস্ত কর্মকেই নিবৃত্তির অভিমুখ করা। সোপান যেমন সোপানকে অতিক্রম করিবার উপায়, ভারতবর্ষে কর্ম তেমনি কর্মকে অতিক্রম করিবার উপায়। আমাদের সমস্ত শাস্ত্রে পুরাণে এই উপদেশই দিয়াছে। এবং আমাদের সমাজ এই ভাবের উপরেই প্রতিষ্ঠিত । - যুরোপ কর্মকে কর্ম হইতে মুক্তির সোপান করে নাই, কর্মকেই লক্ষ্য করিয়াছে। এইজন্য যুরোপে কর্মসংগ্রামের অস্ত নাই— সেখানে কর্ম ক্রমশই বিচিত্র ও বিপুল হইয়া উঠিতেছে, কৃতকার্ধ হওয়া সেখানে সকলেরই উদ্দেশু। যুরোপের ইতিহাস কর্মেরই ইতিহাস । f # যুরোপ কর্মকে বড়ো করিয়া দেখিয়াছে বলিয়া কর্ম করা সম্বন্ধে স্বাধীনতা চাহিয়াছে। আমরা যাহা ইচ্ছা তাহা করিব ; সেই স্বাধীন ইচ্ছা যেখানে অন্তের কর্ম করিবার স্বাধীনতাকে হনন করে কেবল সেইখানেই আইনের প্রয়োজন। এই আইনের শাসন ব্যতিরেকে সমাজের প্রত্যেকের যথাসম্ভব স্বাধীনতা থাকিতেই পারে না। এইজন্ত যুরোপীয় সমাজে সমস্ত শাসন ও শাসনের অভাব প্রত্যেক মানুষের ইচ্ছাকে স্বাধীন করিবার জন্যই কল্পিত । 醬 - ভারতবর্ষও স্বাধীনতা চাহিয়াছে, কিন্তু সে স্বাধীনতা একেবারে কর্ম হইতে স্বাধীনতা । আমরা জানি, আমরা যাহাকে সংসার বলি সেখানে কর্মই বস্তুত কর্তা, মানুষ তাহার বাহনমাত্র। জন্ম হইতে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা এক বাসনার পরে আরএক বাসনাকে, এক কর্ম হইতে আর-এক কর্মকে বহন করিয়া চলি, ইপি ছাড়িবার সময় পাই না— তাহার পরে সেই কর্মের ভার অন্তের ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়া হঠাৎ মৃত্যুর মধ্যে সরিয়া পড়ি। এই-বে বাসনার তাড়নায় চিরজীবন অস্তবিহীন কর্ম করিয়া যাওয়া, ইহারই অবিরাম দাসত্ব ভারতবর্ষ উচ্ছেদ করিতে চাহিয়াছে। এই লক্ষ্যের পার্থক্য থাকাতেই য়ুরোপ বাসনাকে যথাসম্ভব স্বাধীনতা দিয়াছে এবং আমরা বাসনাকে যথাসম্ভব খর্ব করিয়াছি। বাসনা যে কোনো দিনই শাস্তিতে লইয়৷ যায় না, পরিণামহীন কর্মচেষ্টাকে জাগ্রত করিয়া রাখে, ইহাকেই আমরা বাসনার দৌরাত্ম্য বলিয়া অসহিষ্ণু হইয়া উঠি। যুরোপ বলে, বাসন যে কোনো পরিণামে লইয়া যায় না, তাহ নিয়তই ষে আমাদের প্রয়াসকে উক্তি করিয়া রাখে, ইহাই তাহার গৌরব । যুরোপ বলে, প্রাপ্তি নহে– সন্ধানই আনন্দ। ভারতবর্ষ বলে, তোমরা যাহাকে প্রাপ্তি বল তাহাতে জানন্দ নাই বটে ; কারণ সে প্রাপ্তির মধ্যে আমাদের সন্ধানের শেষ নাই, লে প্রাপ্তি আমাদিগকে অন্ত প্রাপ্তির দিকে টানিয়া লইয়া
