পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা 82} সহিত আলাপ করিলেন । বোধ করি গুনিয়া কেহ বিস্থিত হইবেন না, সাহেব নিজের এই অবিকল অস্থকরণ দেখিয়া সন্তোষলাভ করেন নাই । . . ইতিমধ্যে কলেজের কার্যপ্রণালী সম্বন্ধে তাহার সহিত কর্তৃপক্ষের মতাম্ভর হওয়ায় ঈশ্বরচন্দ্র কর্মত্যাগ করিলেন। সম্পাদক রসময় দত্ত এবং শিক্ষাসমাজের অধ্যক্ষ ময়েট সাহেব অনেক উপরোধ-অনুরোধ করিয়াও কিছুতেই তাহার পণভঙ্গ করিতে পারিলেন না। আত্মীয়-বান্ধবের তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার চলিবে কী করিয়া r তিনি বলিলেন, জালুপটল বেচিয়া, মুদির দোকান করিয়া দিন চালাইব। তখন বাসায় প্রায় কুড়িটি বালককে তিনি অন্নবস্ত্ৰ দিয়া অধ্যয়ন করাইতেছিলেন— তাহাদের কাহাকেও বিদায় করিলেন না। র্তাহার পিতা পূর্বে চাকরি করিতেন— বিষ্ঠাসাগরের সবিশেষ অনুরোধে কার্বত্যাগ করিয়া বাড়ি বসিয়া সংসারখরচের টাকা পাইতেছিলেন। বিদ্যাসাগর কাজ ছাড়িয়া দিয়া প্রতি মাসে ধার করিয়৷ পঞ্চাশ টাকা বাড়ি পাঠাইতে লাগিলেন। এই সময় ময়েট সাহেবের অনুরোধে বিদ্যাসাগর কাপ্তেন ব্যাঙ্ক নামক একজন ইংরাজকে কয়েক মাস বাংলা ও হিন্দি শিখাইতেন । সাহেব বখন মাসিক পঞ্চাশ টাকা হিসাবে বেতন দিতে গেলেন তিনি বলিলেন, “আপনি ময়েট সাহেবের বন্ধু এবং ময়েট সাহেব আমার বন্ধু— আপনার কাছে আমি বেতন লইতে পারি না।’ ১৮৫০ খ্ৰীস্টাব্দে বিদ্যাসাগর সংস্কৃতকলেজের সাহিত্য-অধ্যাপক ও ১৮৫১ খ্রীস্টাবো উক্ত কলেজের প্রিন্সিপল পদে নিযুক্ত হন। আট বৎসর দক্ষতার সহিত কাজ করিয়া শিক্ষাবিভাগের নবীন কর্তা এক তরুণ সিবিলিয়ানের সহিত মনান্তর হইতে থাকায় ১৮৫৮ খ্ৰীস্টাৰে তিনি কর্ম ত্যাগ করেন। বিদ্যাসাগর স্বভাবতই সম্পূর্ণ স্বাধীনতন্ত্রের লোক ছিলেন ; অব্যাহতভাবে আপন ইচ্ছা চালনা করিতে পাইলে তবে তিনি কাজ করিতে পারিতেন, উপরিতন কর্তৃপক্ষের মতের দ্বারা কোনোরূপ প্রতিঘাত প্রাপ্ত হইলে তদন্থসারে আপন সংকল্পের প্রবাহ তিলমাত্র পরিবর্তন করিতে পারিতেন না । কর্মনীতির নিয়মে ইহা তাহার পক্ষে প্রশংসনীয় ছিল না। কিন্তু বিধাতা তাহাকে একাধিপত্য করিবার জন্ত পাঠাইয়াছিলেন ; অধীনে কাজ চালাইবার গুণগুলি তাহাকে দেন নাই। উপযুক্ত অধীনস্থ কর্মচারী বাংলাদেশে যথেষ্ট আছে ; বিদ্যাসাগরকে দিয়া তাহাজের সংখ্যাবৃদ্ধি করা বিধাতা অনাবশুক ও অসংগত বোধ করিয়াছিলেন। বিভাসাগর যখন সংস্কৃতকলেজে নিযুক্ত, তখন কলেজের কাজকর্মের মধ্যে থাকিয়াও এক প্রচও সমাজসংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন একদিন বীরসিংহবাটীর চণ্ডীমণ্ডপে বসিয়া ঈশ্বরচন্দ্র তাহার পিতার সহিত বীরসিংহ স্কুল সম্বন্ধে আলোচনা করিতেছিলেন, време