পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী و\ه 6 স্বষ্টিকার্ধ অনবরত চলিতেছে, কিন্তু এখনও সর্বত্র ষেন দানা বাধিয়া উঠে নাই। মাঝে মাঝে এক-এক স্থানে যখন তাহ পরিস্ফুট হইয় উঠে তখন চারি দিকের সহিত তাহার পার্থক্য অত্যন্ত বেশি বোধ হয়। বাংলাদেশে বিদ্যাসাগরকে সেইজন্ত সাধারণ হইতে অত্যন্ত পৃথক দেখিতে হইয়াছে। সাধারণত আমরা যে পরমার্থের প্রভাব একেবারেই অনুভব করি না তাহা নহে। মধ্যে মধ্যে বহুকাল গুমটের পর হঠাৎ একদিন ভিতর হইতে একটা আধ্যাত্মিক ঝড়ের বেগ আমাদিগকে স্বার্থ ও সুবিধা লঙ্ঘন করিয়া আরাম ও অভ্যাসের বাহিরে ক্ষণকালের জন্য আকর্ষণ করে, কিন্তু সে-সকল দমকা হাওয়া চলিয়া গেলে সে কথা অার মনেও থাকে না, আবার সেই আহারবিহার আমোদপ্রমোদের নিত্যচক্রের মধ্যে ঘুরিতে আরম্ভ করি। ইহার কারণ, মনোজীবন আমাদের মধ্যে পরিণতি লাভ করে নাই, আগাগোড়া বাধিয়া যায় নাই । চেতন ও বেদনার আভাস সে অকুভব করে, কিন্তু তাহার স্থায়িত্ব নাই। অনুভূতি হইতে কার্যসম্পাদন পর্যন্ত অবিচ্ছেদ যোগ ও অনিবাৰ্ধ বেগ থাকে না । কাজের সহিত ভাবের ও ভাবের সহিত মনের সচেতন নাড়ীজালের সজীব বন্ধন স্থাপিত হয় নাই। যাহাদের মধ্যে সেই বন্ধন স্থাপিত হইয়াছে, যাহারা সেই দ্বিতীয় জীবন লাভ করিয়াছেন, পরমার্থ-দ্বারা শেষ পর্যন্ত চালিত না হইয়া তাহাদের থাকিবার জো নাই। র্তাহীদের একটা দ্বিতীয় চেতনা আছে— সে চেতনার সমস্ত বেদনা আমাদের অনুভবের অতীত । বিদ্যাসাগর সেই দ্বিতীয় চেতনা লইয়া সংসারে জন্মগ্রহণ করাতে তাহার বেদনার অস্ত ছিল না। চারি দিকের অসাড়তার মধ্যে এই ব্যথিত বিশাল হৃদয় কেবল নিঃসহায়ভাবে, কেবল আপনার প্রাণের জোরে, কেবল আপনার বেদনার উত্তাপে একাকী অাপন কাজ করিয়া গিয়াছেন । 1 I সাধারণ লোকের হিসাবে সে-সমস্ত কাজের কোনো প্রয়োজন ছিল না । তিনি কেবলমাত্র পাণ্ডিত্যে এবং বিদ্যালয়পাঠ্য গ্রন্থ -বিক্রয়দ্বারা ধনোপার্জনে সংসারে যথেষ্ট সম্মান-প্রতিপত্তি লাভ করিয়া যাইতে পারিতেন। কিন্তু তাহার নিজের হিসাবে এ-সমস্ত কাজের একান্ত প্রয়োজন ছিল ; নতুবা তিনি যে অধিক জীবন বহন করিতেন সে জীবনের নিশ্বাসরোধ হইত, তাহার ধনোপার্জন ও সম্মানলাভে তাহাকে রক্ষা করিতে পারিত না । M 4. বালবিধবার দুঃখে দুঃখবোধ আমাদের পক্ষে একটি ক্ষণিক ভাবোন্ত্রেক মাত্র ।