পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা &\లి আমাদের কী দুর্ভাগ্য! আমরা প্রত্যেকেই নিজে নিজেকে মন্তলোক মনে করিয়া নিজের পায়ে পান্ত-অৰ্ঘ্য দিতেছি, বাম্পের প্রভাবে স্ফীত হইয়া লঘু হৃদয়কে লঘুতর করিয়া তুলিতেছি। প্রতিদিনকার ছোটাে ছোটাে মস্তলোকদিগকে, বন্ধসমাজের বড়ো বড়ে যশোবুদবুদ্বদিগকে, বালুকার সিংহাসনের উপর বসাইয়া দুই দিনের মতো পুষ্পচন্দন দিয়া মহত্বপূজার স্পৃহা খেলাচ্ছলে চরিতার্থ করিতেছি, বিদেশীয়দের অস্থকরণে কথায় কথায় সত্য ডাকিয়া চাদ তুলিয়া মহত্বপূজার একটা ভান ও আড়ম্বর করিতেছি। এজলাস হইতে জোনস সাহেব চলিয়া গেলে হাটে তাহার ছবি টাঙাইয়া রাখি, জেম্স্ সাহেব আসিলে তাহার পায়ে পুষ্পমাল্য দিই। অর্থের, বিনয়ের, উদারতার অভাব দেখিতে পাই না। কেবল আমাদের যথার্থ স্বদেশীয় মহাপুরুষকেই হৃদয় হইতে দূরে রাখিয়া, তাহাকে সম্মান করিবার ভার বিদেশীদের উপরে অর্পণ করিয়া নিশ্চিন্ত মনে বসিয়া রহিয়াছি ও প্রতিদিন তিন বেলা তিনটে করিয়া নূতন নূতন মৃৎপ্রতিমা-নির্মাণে নিরতিশয় ব্যস্ত হইয়া আছি। বর্তমান বঙ্গসমাজের ভিত্তি স্থাপন করিয়াছেন রামমোহন রায় । আমরা সমস্ত বঙ্গবাসী তাহার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, তাহার নির্মিত ভবনে বাস করিতেছি। তিনি আমাদের জন্য যে কত করিয়াছেন, কত করিতে পারিয়াছেন, তাহা ভালো করিয়া আলোচনা করিয়া দেখিলে তাহার প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি ও স্বজাতির প্রতি বিশ্বাস জন্মিবে। আমাদিগকে যদি কেহ বাঙালি বলিয়া অবহেলা করে আমরা বলিব, রামমোহন রায় বাঙালি ছিলেন। রামমোহন রায়ের চরিত্র আলোচনা করিবার আর-একটি গুরুতর আবশুকতা আছে । আমাদের এখনকার কালে তাহার মতো আদশের নিতান্ত প্রয়োজন হইয়াছে। আমরা কাতর স্বরে তাহাকে বলিতে পারি, রামমোহন রায়, আহ, তুমি যদি আজ বাচিয়া থাকিতে ! তোমাকে বদদেশের বড়োই আবশ্বক হইয়াছে। আমরা বাকপটু লোক, আমাদিগকে তুমি কাজ করিতে শিখাও। আমরা আত্মম্ভরী, আমাদিগকে আত্মবিসর্জন দিতে শিখাও। আমরা লঘুপ্রকৃতি, বিপ্লবের স্রোতে চরিত্রগৌরবের প্রভাবে আমাদিগকে অটল থাকিতে শিখাও। আমরা বাহিরের প্রখর আলোকে অন্ধ, হৃদয়ের অভ্যস্তরস্থ চিরোজ্জল জালোকের সাহায্যে ভালোমন্দ নির্বাচন করিতে ও স্বদেশের পক্ষে বাহা স্থায়ী ও যথার্থ মঙ্গল তাহাই অবলম্বন করিতে लिक भांe ।।' রামমোহন রায় যথার্থ কাজ করিয়াছেন। তাহার সময়ে প্রগলত রসনার এত জীবৃদ্ধি হয় নাই, স্বতরাং তাহার এত সমাদরও ছিল না। কিন্তু আর-একটা কথা