পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

€२● রবীন্দ্র-রচনাবলী বিজ্ঞান-দর্শনের স্তায় ধর্ম যদি কেবলমাত্র জ্ঞানের বিষয় হইত— হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিবার, লাভ করিবার, সঞ্চয় করিবার বিষয় না হইত— ধর্ম যদি গৃহের অলংকারের ম্ভায় কেবল গৃহভিত্তিতে জুলাইয়া রাখিবার সামগ্ৰী হইত, আমাদের সংসারের প্রত্যেক ক্ষুদ্র কাজের প্রবর্তক নিবর্তক না হইত— তাহা হইলে এরূপ না করিলেও চলিত। তাহা হইলে নানাবিধ বিদেশী অলংকারে গৃহ সাজাইয়া রাখা যাইত । কিন্তু ধর্ম নাকি হৃদয়ে পাইবার ও সংসারের কাজে ব্যবহার করিবার দ্রব্য, দূরে রাখিবার নহে, এইজন্যই স্বদেশের ধর্ম স্বদেশের জন্য বিশেষ উপযোগী। ব্ৰহ্ম সমস্ত জগতের ঈশ্বর, কিন্তু তিনি বিশেষরূপে ভারতবর্ষেরই ব্ৰহ্ম । অন্য কোনো দেশের লোকে উীহাকে ব্ৰহ্ম বলিয়া জানে না, ব্রহ্ম বলিতে আমরা ঈশ্বরকে যেরূপ ভাবে বুঝি ঈশ্বরের অন্ত কোনো বিদেশীয় নামে বিদেশীয়েরা কখনোই উহাকে ঠিক সেরূপ ভাবে বুঝে না। বুঝে বা না বুঝে জানি না, কিন্তু ব্ৰহ্ম বলিতে আমাদের মনে যে ভাবের উদয় হইবে ঈশ্বরের অন্য কোনো বিদেশীয় নামে আমাদের মনে সে ভাব কখনোই উদয় হইবে না। ব্ৰহ্ম একটি কথার কথা নহে— যে ইচ্ছা পাইতে পারে না, যাহাকে ইচ্ছা দেওয়া যায় না। ব্ৰহ্ম আমাদের পিতামহদের অনেক সাধনার ধন ; সমস্ত সংসার বিসর্জন দিয়া, সমস্ত জীবনক্ষেপণ করিয়া, নিভৃত অরণ্যে ধ্যানধারণ করিয়া আমাদের ঋষিরা আমাদের ব্রহ্মকে পাইয়াছিলেন । আমরা তাহাদের সেই আধ্যাত্মিক সম্পদের উত্তরাধিকারী। অার-কোনো জাতি ঠিক এমন সাধনা করে নাই, ঠিক এমন অবস্থায় পড়ে নাই, এইজন্ত ব্ৰন্ধকে প্রাপ্ত হয় নাই। প্রত্যেক জাতি বিশেষ সাধন। -অনুসারে বিশেষ ফল প্রাপ্ত হয়, সেই ফল তাহারা অন্ত জাতিকে দান করে। এইরূপে সমস্ত পৃথিবীর উপকার হয়। আমাদের এত সাধনার ফল কি আমরা ইচ্ছাপূর্বক অবহেলা করিয়া ফেলিয়া দিব ? এইজন্তই বলি, ব্রাহ্মধর্ম পৃথিবীর ধর্ম বটে, পৃথিবীকে আমরা এ ধর্ম হইতে বঞ্চিত করিতে পারিও না চাহিও না, কিন্তু অবস্থা ও সাধনা -বিশেষের গুণে ইহা বিশেষরূপে ভারতবর্ষেরই ব্রাহ্মধর্ম হইয়াছে, ব্রাহ্মধর্মের জন্য পৃথিবী ভারতবর্ষেরই নিকটে ঋণী। আমি যদি উদারতপূর্বক বলি, খ্ৰীষ্টধর্মে ব্রাহ্মধর্ম আছে, মুসলমান-ধর্মে ব্রাহ্মধর্ম আছে, তবে উদারতানামক পরম শ্রুতিমধুর শব্দটার গুণে তাহ কানে খুব ভালো শুনাইতে পারে, কিন্তু কথাটা মিথ্যা কথা হয়। স্বতরাং সত্যের অনুরোধে মিথ্যা উদারতাকে ত্যাগ করিতে হয়। এইজন্য রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মধর্ম ঋষিদেরই ব্রাহ্মধর্ম, সমস্ত জগতে ইহাকে প্রচার করিতে হইবে, এইজন্ত সর্বাগ্রে ভারতবর্ষে ইহাকে বিশেষরূপে রোপণ করিতে হইবে । ভারতবর্ষের তো দারিত্র্যের অভাব নাই, জীবন্ত ঈশ্বরকে হারাইয়া ভারতবর্ষ