পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ミや রবীন্দ্র-রচনাবলী অমান হৃদয়কে ধ্রুবজ্যোতির দিকে উদঘাটিত করিয়া রাখিলেন। সম্পদ ধাহাকে অমৃতলাভ হইতে তিরস্কৃত করিতে পারে নাই, বিপদও র্তাহাকে অমৃতসঞ্চয় হইতে বঞ্চিত করিতে পারিল না। সেই দুঃসময়কেই তিনি আত্মজ্যোতির দ্বার স্বসময় করিয়া তুলিয়াছিলেন ; যখন তাহার ধনসম্পদ ধূলিশায়ী তখনই তিনি তাহার দৈন্তের উর্ধের্ব দণ্ডায়মান হইয়া পরমাত্মসম্পদবিতরণের উপলক্ষ্যে সমস্ত ভারতবর্ষকে মুহুর্মুহ আহবান করিতেছিলেন। সম্পদের দিনে তিনি ভুবনেশ্বরের দ্বারে রিক্তহস্তে ভিক্ষু হইয়া দাড়াইয়াছিলেন, বিপদের দিনে তিনি আত্মৈশ্বর্ষের গৌরবে ব্রহ্মসত্র খুলিয়া বিশ্বপতির প্রসাদস্থধাবণ্টনের ভার গ্রহণ করিয়াছিলেন । ঐশ্বর্ষের মুখশষ্য হইতে তুলিয়া লইয়া ধর্ম ইহাকে তাহার পথের মধ্যে দাড় করাইয়া দিল— ক্ষুরস্ত ধারা নিশিতা দুরত্যয়া দুর্গং পথস্তং কবয়ো বদস্তি। কবির বলেন, সেই পথ নিশিত ক্ষুরধারার ন্যায় অতি দুর্গম পথ । লোকাচারপ্রচলিত চিরাভ্যন্ত ধর্ম আরামের ধর্ম, তাহ অন্ধভাবে জড়ভাবেও পালন করিয়া যাওয়া চলে এবং তাহ। পালন করিয়া লোকের নিকট সহজেই যশোলাভ করিতে পারা যায়। ধর্মের সেই আরাম, সেই সম্মানকেও পিতৃদেব পরিহার করিয়াছিলেন। নিশিত ক্ষুরধারার স্তায় দুরতিক্রম্য পথেই তিনি নিৰ্ভয়ে পদনিক্ষেপ করিলেন। লোকসমাজের আনুগত্য করিতে গিয়া তিনি আত্মবিদ্রোহী আত্মঘাতী হইলেন না । ধনিগৃহে যাহাঁদের জন্ম, পৈতৃক কাল হইতেই সমাজের নিকট সম্মানলাভে র্যাহারা অভ্যস্ত, সমাজপ্রচলিত সংস্কারের নিবিড় ব্যুহ ভেদ করিয়া নিজের অস্তলৰ সত্যের পতাকাকে শক্রমিত্রের ধিক্কার লাঞ্ছনা ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে অবিচলিত দৃঢ়মুষ্টিতে ধারণ করিয়া রাখা তাহদের পক্ষে কোনোমতেই সহজ নহে– বিশেষত বৈষয়িক সংকটের সময় সকলের আমুকুল্য যখন অত্যাবগুক হইয়া উঠে তখন তাহা যে কিরূপ কঠিন সে কথা সহজেই অনুমান করা যাইতে পারে। সেই তরুণ বয়সে, বৈষয়িক দুর্বোগের দিনে, সম্রাস্তসমাজে তাহার যে বংশগত প্রভূত প্রতিপত্তি ছিল তাহার প্রতি দুকৃপাত না করিয়া, পিতৃদেব ভারতবর্ষের ঋষিবন্দিত চিরন্তন ব্রন্ধের— সেই অপ্রতিম দেবাদিদেবের আধ্যাত্মিক পূজা প্রতিকূল সমাজের নিকট মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা করিলেন । তাহার পরে তাহার জীবনে আর-এক গুরুতর সংগ্রামের দিন উপস্থিত হইল। সকলেই জানেন, বৈচিত্র্যই জগতের ঐক্যকে প্রমাণ করে, বৈচিত্র্য যতই স্বনির্দিষ্ট হয় । ঐক্য ততই সুস্পষ্ট হইয়া উঠে। ধর্মও সেইরূপ নানা সমাজের ইতিহাসকে জাপ্রয় করিয়া নানা বিভিন্ন কণ্ঠে নানা বিচিত্র আকারে এক নিত্যসত্যকে চারি দিক হইতে