পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q8br রবীন্দ্র-রচনাবলী সাধনায় মুত্রিত পাঠ প্রচলিত সঞ্চয়িত গ্রন্থের গ্রন্থপরিচয়ে আদ্যন্ত সংকলিত হইয়াছে। বলা প্রয়োজন, ঐ পাঠই এই কবিতার মূল পাঠ নয় ; কারণ, রবীন্দ্রনাথ নিজেই প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়কে লিখিতেছেন— প্রেমের অভিষেক কবিতটি চিত্র কাব্যে যে আকারে বাহির হইয়াছে তাহাকে সংশোধন বলা যায় না—কারণ, ইহাই উহার আদিম রূপ। সাধনা’য় যখন পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত মূর্তিতে দেখা দিয়াছিল তখন কাহারও কাহারও মনে এতই আঘাত করিয়াছিল যে, বন্ধুবিচ্ছেদ হইবার জে হইয়াছিল। [ ৬ চৈত্র ১৩০২ ] —প্রবাসী। বৈশাখ ১৩০৯, পৃ • পূর্ণিমা’ কবিতার প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সমকালীন একটি রচনা উদ্ধার করা যাইতে পারে— সেদিন সন্ধ্যাবেলায় একখানা ইংরিজি সমালোচনার বই নিয়ে কবিতা সৌন্দর্য আর্ট প্রভৃতি মাথামুণ্ড নানা কথার নানা তর্ক পড়া যাচ্ছিল। এক-এক সময় এই-সমস্ত কথার বাজে আলোচনা পড়তে পড়তে শ্রান্তচিত্তে সমস্তই মরীচিকাবং শূন্ত বোধ হয় ; মনে হয়, এর বারো আনা কথা বানানো । সেদিন পড়তে পড়তে মনটার ভিতরে একটা নীরস শ্রাস্তির উদ্রেক হয়ে একটা বিদ্রুপপরায়ণ সন্দেহ-শয়তানের আবির্ভাব হল। এ দিকে রাত্রিও অনেক হওয়াতে বইটা ধণ করে মুড়ে ধপু করে টেবিলের উপর ফেলে দিয়ে শুতে যাবার উদ্দেশে এক ফুয়ে বাতি নিবিয়ে দিলুম। দেবামাত্রই হঠাৎ চারি দিকের সমস্ত খোলা জানলা থেকে বোটের মধ্যে জ্যোংস্না একেবারে ভেঙে পড়ল। হঠাং যেন আমার চমক ভেঙে গেল । আমার ক্ষুদ্র একরত্তি বাতির শিখা শয়তানের মতো নীরস হাসি হাসছিল, অথচ সেই অতিক্ষুদ্র বিক্রপহাসিতে এই বিশ্বব্যাপী গভীর প্রেমের অসীম আনন্দচ্ছটাকে একেবারে আড়াল করে রেখেছিল। নীরস গ্রন্থের বাক্যরাশির মধ্যে কী খুজে বেড়াচ্ছিলুম! সে কতক্ষণ থেকে সমস্ত আকাশ পরিপূর্ণ করে নিঃশব্দে বাইরে দাড়িয়ে ছিল। যদি দৈবাৎ না দেখে অন্ধকারের মধ্যে শুতে যে তুম তা হলেও সে আমার সেই ক্ষুদ্র বাতির ব্যঙ্গের কিছুমাত্র প্রতিবাদ না করে নীরবেই নিলীন হয়ে যেত। যদি ইহজীবনে নিমেষের জন্তও তাকে নী দেখতে পেতুম এবং শেষরাত্রের অন্ধকারে শেষবারের মতে শুতে বেতুম তা হলেও সেই বাতির আলোরই জিত থেকে যেত ; অথচ সে বিশ্বকে ব্যাপ্ত করে সেইরকম নীরবে সেইরকম মধুর মুখেই হাস্ত করত— আপনাকে গোপন করত না, আপনাকে প্রকাশও করত না । [ শিলাইদহ, ১২ ডিসেম্বর ১৮৯৫ ] --জিয়পত্র