পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় (to S রবীন্দ্রনাথ তাহার ‘অন্তৰ্বামী ‘জীবনদেবতা সম্বন্ধে “বঙ্গভাষার লেখক’ ( ১৩১১) গ্রন্থে আত্মপরিচয়ে বাহ বলিয়াছিলেন (অধুনা ‘আত্মপরিচয় গ্রন্থের অন্তর্গত ) এইখানে তাহা উদদ্ভুত করা যাইতে পারে— আমার স্বদীর্ঘকালের কবিতা লেখার ধারাটাকে পশ্চাৎ ফিরিয়া যখন দেখি তখন ইহ স্পষ্ট দেখিতে পাই, এ একটা ব্যাপার যাহার উপরে আমার কোনো কর্তৃত্ব ছিল না। যখন লিখিতেছিলাম তখন মনে করিয়াছি আমিই লিখিতেছি বটে, কিন্তু আজি জানি কথাটা সত্য নহে। কারণ, সেই খণ্ডকবিতাগুলিতে আমার সমগ্র কাব্যগ্রন্থের তাৎপর্ষ সম্পূর্ণ হয় নাই— সেই তাৎপর্যটি কী তাহাও আমি পূর্বে জানিতাম না। এইরূপে পরিণাম না জানিয়া আমি একটির সহিত একটি কবিতা যোজনা করিয়া আসিয়াছি ; তাহাদের প্রত্যেকের যে ক্ষুত্র অর্থ কল্পনা করিয়াছিলাম, আজ সমগ্রের সাহায্যে নিশ্চয় বুঝিয়াছি, সে অর্থ অতিক্রম করিয়া একটি অবিচ্ছিন্ন তাৎপর্ব তাহাদের প্রত্যেকের মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইয়া আসিয়াছিল। তাই দীর্ঘকাল পরে একদিন লিথিয়াছিলাম— মুখ হতে তুমি ভাবা কেড়ে লহ, মোর কথা লয়ে তুমি কথা কহ মিশায়ে আপন স্বরে। কী বলিতে চাই সব ভুলে যাই, তুমি বা বলাও আমি বলি তাই, সংগীতস্রোতে কুল নাহি পাই— কোথা ভেসে বাই দূরে। বিশ্ববিধির একটা নিয়ম এই দেখিতেছি যে, বেটা আসয়, যেটা উপস্থিত, তাহাকে সে খর্ব করিতে দেয় না। তাহাকে এ কথা জানিতে দেয় না যে, সে একটা সোপানপরম্পরার অঙ্গ। তাহাকে বুঝাইয়া দেয় যে, সে আপনাতে আপনি পর্যাপ্ত। ফুল ৰখন ফুটা উঠে তখন মনে হয় স্থলই যেন গাছের একমাত্র লক্ষ্য—এমনি তাহার সৌন্দর্য, এমনি তাহার স্বগন্ধ যে, মনে হয়, যেন সে বনলীর সাধনার চরমধন— কিন্তু