পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

こobr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী মনে আছে ছেলেবেলা গল্প শুনিয়াছি মার কাছে- তাদের গ্রামের কাছাকাছি ছিল এক বন্ধ্যা নারী, না পাইয়া পথ প্ৰথম গর্ভের ছেলে করিল মানত মা গঙ্গার কাছে ; শেষে পুত্ৰজন্ম-পরে অভাগী বিধবা হল, গেল সে সাগরে, কহিল সে নিষ্ঠাভরে মা গঙ্গারে ডেকে, মা, তোমারি কোলে আমি দিলাম। ছেলেকে— এ মোর প্রথম পুত্র, শেষ পুত্র এই, এ জন্মের তরে আর পুত্ৰ-আশা নেই । যেমনি জালেতে ফেলা, মাতা ভাগীরথী মকরবাহিনী-রূপে হয়ে মূর্তিমতী শিশু লয়ে আপনার পদ্মকরতলে মার কোলে সমাপিল । নিষ্ঠা এরে বলে ।” মল্লিকা ফিরিয়া এল নতশির করে, আপনারে ধিক্কারিল— এতদিন ধরে বৃথা ব্ৰত করিলাম, বৃথা দেবাৰ্চনা, নিষ্ঠাহীনা পাপিষ্ঠারে ফল মিলিল না । ঘরে ফিরে এসে দেখে শিশু অচেতন জুরাবেশে । অঙ্গ যেন অগ্নির মতন । ঔষধ গিলাতে যায় যত বারবার পড়ে যায়, কণ্ঠ দিয়া নামিল না। আর । দন্তে দন্তে গোল আঁটি । বৈদ্য শিরা নাড়ি ধীরে ধীরে চলি গৈল রোগীগৃহ ছাড়ি । সন্ধ্যার আঁধারে শূন্য বিধবার ঘরে একটি মলিন দীপ, শয়নশিয়রে এক শোকাতুরা নারী । শিশু একবার জ্যোতিহীন আঁখি মেলি যেন চারি ধার খুজিল কাহারে । নারী কঁাদিল কাতর, “ও মানিক, ওরে সোনা, এই-যে মা তোর, এই-যে মায়ের কোল, ভয় কী রে বাপ !” বক্ষে তারে চাপি ধরি তার জ্বরতাপ প্ৰাণপণে । সহসা বাতাসে গৃহদ্বার | খুলে গেল, ক্ষীণ দীপ নিবিল তখনি— সহসা বাহির হতে কলকলধ্বনি পশিল গৃহের মাঝে । চমকিল নারী { দাড়ায়ে উঠিল বেগে শয্যাতল ছাড়ি,