পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S 8 S দুলোকে-ভূলোকে ভাবে নাই কেহ আছে সে কিসের খোজে, হেন সংশয় ছিল না কাহারও সে যে কোনো কথা বোঝে । বিশ্বপ্রকৃতি তার কাছে তাই ছিল নাকে সাবধানে, ঘন ঘন তার ঘোমটা খসিত ভাবে ইঙ্গিতে গানে । দ্বারপাশে তারে বসিতে দেখিয়া রুধিয়া দিত না। তবু। যদি সে নিভৃত শয়নের পানে চাহিত নয়ন তুলি শিয়রের দীপ নিবাইতে কেহ ষ্টুড়িত না ফুল ধূলি । এরে দেখি হেসে ভাবিত, এ লোক জানে না চোখের ভাষা । নলিনী যখন খুলিত পরান চাহি তপনের পানে ভাবিত, এজন ফুলগন্ধের অর্থ কিছু না জানে । তড়িৎ যখন চকিত নিমেষে পালাত চুমিয়া মেঘে ভাবিত, এ খ্যাপা কেমনে বুঝিবে কী আছে। অগ্নিবেগে ! সহকারশাখে কঁাপিতে কঁাপিতে ভাবিত মালতীলতা, আমি জানি আর তরু জানে শুধু কলমৰ্মরকথা । একদা ফাগুনে সন্ধ্যাসময়ে সূর্য নিতেছে ছুটি, পূর্বর্গগনে পূর্ণিমা চাদ করিতেছে উঠি-উঠি, কোনো পুরনারী তরু-আলবালে জল সেচিবার ভানে ছল করে শাখে আঁচল বাধায়ে ফিরে চায় পিছুপানে, ' কোনো সাহসিকা দুলিছে দোলায় হাসির বিজুলি হানি— না চাহে নামিতে, না চাহে থামিতে, না মানে বিনয়বাণী, কোনো মায়াবিনী মৃগশিশুটিরে তৃণ দেয় একমনে— পাশে কে দাড়ায়ে চিনেও তাহারে চাহে না চোখের কোণে । হেনকালে কবি গাহিয়া উঠিল, “নরনারী, শুন সবে, কত কাল ধরে কী যে রহস্য ঘটিছে নিখিল ভাবে ! এ কথা কে কবে স্বপনে জানিত, আকাশের চাদ চাহি পাণ্ডুকপোল কুমুদীর চোখে সারা রাত নিদ নাহি । উদয়-অচলে অরুণ উঠিলে কমল ফুটে যে জলে এত কাল ধরে তাহার তত্ত্ব ছাপা ছিল কোন ছলে ! এত যে মন্ত্র পড়িল ভ্ৰমর নবমালতীর কানে বড়ো বড়ো যত পণ্ডিতজনা বুঝিল না তার মানে ? শুনিয়া তপন অস্তে নামিল শরমে গগন ভরি, শুনিয়া চন্দ্ৰ থমকি রহিল বনের আড়াল ধরি ! শুনে সরোবরে তখনি পদ্ম নয়ন মুদিল তুরা, দখিন-বাতাস বলে গেল তারে- সকলি পড়েছে ধরা !