পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OGO る ब्रोक्ष-ब्रष्नादी করলেন ; কিন্তু ওর রাগিণীটি আমাকে অনুগ্রহ করে বলে দেবেন ? একবার তো দেখছি, ধৈবত লাগছে, আবার দেখি কোমল ধৈবতও লাগে, আবার গোড়ার দিকে— ওঃ, বুঝেছি, আপনাদের কেবল ভালোই লাগে, কিন্তু ভালো লাগবার কোনাে নিয়ম নেই। আমাদের ঠিক তার উলটাে, ভালো না লগতে পারে, কিন্তু নিয়মটা থাকবেই। আপনাদের স্বর্গে যেটি আবশ্যক সেটি নেই, যেটা না হলে চলে । তার অনেক বাহুল্য। সমস্ত সপ্তম্বৰ্গ খুঁজে কায়ক্লেশে যদি আধখানা নিয়ম পাওয়া যায় তো তখনি তার হাজারখানা ব্যতিক্রম বেরিয়ে পড়ে। সকল বিষয়েই তাই দেখছি। ঐ দেখুন-না যড়ানন বসে আছেন, ওঁর ছটার মধ্যে পাঁচটা মুণ্ডুর কোনােই অর্থ পাবার জো নেই। শরীরতত্ত্বের ক-খও যে জানে সেও বলে দিতে পারে একটা স্কন্ধের উপরে ছটা মুণ্ড নিতান্তই বাহুল্য। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ ! ওঁর ছয় মাতার স্তন পান করতে ওঁকে ছটা মুণ্ড ধারণ করতে হয়েছিল ? ওটা হল মাইথ'লজি, আমি ফিজিয়লজির কথা বলছিলুম। ছটা যেন মুণ্ডই ধারণ করলেন, পাকযন্ত্র তো একটার বেশি ছিল না। এই দেখুন-না, আপনাদের স্বর্গের বন্দোবস্তটা- আপনারা শরীর থেকে ছায়াটাকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু সেটা আপনাদের কী অপরাধ করেছিল ? আপনার স্বর্গের লোক, বললে হয়তো বিশ্বাস করেন না, আমি জন্মকাল থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত ঐ ছায়াটাকে কখনো পশ্চাতে, কখনো সম্মুখে, কখনো দক্ষিণে, কখনো বামে সঙ্গে করে নিয়ে কাটিয়েছি, ওটাকে পুষতে একদিনের জন্যে সিকিপয়সা খরচ করতে হয়নি এবং অত্যন্ত শ্ৰান্তির সময়ও বহন করতে এক তিল ভার বোধ করি নি- ওটাকে আপনারা ছেটে দিলেন, কিন্তু ছটা মুণ্ড, চারটি হাত, হাজারটা চােখ, এতে খরচও আছে, ভারও আছে, অথচ সেটা সম্বন্ধে একটু ইকনমি করবার দিকে নজর নেই!! ছায়ার বেলাই টানাটানি, কিন্তু কায়ার বেলা মুক্তহস্ত! সাধুবাদ দিচ্ছেন ? দেবতাদের মধ্যে আপনিই তা হলে আমার কথাটা বুঝেছেন! সাধুবাদ আমাকে দিচ্ছেন না ? শ্ৰীমতী রম্ভাকে দিচ্ছেন ? ওঃ ! তা হলে আপনি বসুন, আমি কার্তিকের সঙ্গে আলাপ করে আসি। (কীর্তিকের পার্থে বসিয়া) গুহ, আপনি ভালো আছেন তো ? আপনাদের এখানকার মিলিটারি ডিপার্টমেন্ট সম্বন্ধে আমার দুটাে-একটা খবর নেবার আছে। আপনারা কিরকম নিয়মে— আচ্ছা, তা হলে এখন থাক। আগে আপনাদের অভিনয়টা হয়ে যাক। কেবল একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, এই যে নাটকটি অভিনয় হচ্ছে এর নাম তো শুনছি। ‘চিত্ৰলেখার বিরহ ; এর উদ্দেশ্যটা কী আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। উদ্দেশ্য দু রকমের হতে পারে, এক জ্ঞানশিক্ষা, আর-এক নীতিশিক্ষা। কবি, হয় এই গ্রন্থের মধ্যে কোনাে একটা জাগতিক নিয়ম আমাদের সহজে বুঝিয়ে দিয়েছেন, নয় স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, ভালো করলে ভালো হয়, মন্দ করলে মন্দই হয়ে থাকে। ভেবে দেখুন বিবর্তনবাদের নিয়ম-অনুসারে পরমাণুপুঞ্জ কিরকম করে ক্রমে ক্রমে বিচিত্র জগতে পরিণত হল, কিংবা আমাদের ইচ্ছাশক্তি যে অংশে পূর্ববর্তী কর্মের ফল সেই অংশে বদ্ধ এবং যে অংশে পরবর্তী কর্মকে জন্ম দেয় সেই অংশে মুক্ত এই চিরস্থায়ী বিরোধের সামঞ্জস্য কোনখানে— কাব্যে যখন সেই তত্ত্ব পরিস্ফুট হয় তখন কাব্যের উদ্দেশ্যটি হাতে হাতে পাওয়া যায়। চিত্ৰলেখার বিরহের মধ্যে এর কোনটি আছে ? আপনি তাে বিগলিত প্রায় হয়ে এসেছেন ; যেরকম দেখছি দেবলােকে যদি ফিজিয়লজির নিয়ম বলে একটা কিছু থাকত তা হলে এখনই আপনার দ্বাদশ চক্ষু থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হত। যাই হােক কার্তিক, এ বড়ো দুঃখের বিষয়, স্বৰ্গে আপনাদের রাশি রাশি কাব্য-নাটকের ছড়াছড়ি যাচ্ছে, কিন্তু যাতে গবেষণা কিংবা চিন্তাশীলতার পরিচয় পাওয়া যায় স্বগীয় গ্ৰন্থকারদের হাত থেকে এমন একটা কিছুই বেরোচ্ছে না । (ঈষৎ হাস্যসহকারে) দেখছি "চিত্ৰলেখার বিরহ, নাটকখানা আপনার বড়োই ভালো লেগে গেছে, তা হলে অন্য প্রসঙ্গ থাক, আপনি ঐটেই দেখুন। । , (ইন্দ্রের নিকট গিয়া) দেখুন দেবরাজ, স্বর্গে পরস্পরের মতামত আলোচনার একটা স্থান না থাকতে বড়েই অভাব বােধ করা যায়। আমার ইচ্ছা নন্দনকাননের পারিজাতকুঞ্জের মধ্যে যেখানে । আপনাদের নৃত্যশালা আছে, সেইখানে একটা সভা স্থাপন করি, তার নাম দিই শতক্ৰতু ডিবেটিং ক্লাব'। তাতে আপনারও একটা নাম থাকবে। আর স্বর্গেরও অনেক উপকার হবে। না, থাক, মাপ করবেন— আমার অভ্যাস নেই— আমি অমৃত খাই নে— রাগ যদি না করেন তাে বলি, ও অভ্যাসটা