পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক । QVS ভালো করে দেখে-শুনে নিতে চায়, ওর পড়াশুনো গান-বাজনা সব পরীক্ষা করবে- তা করুক। কর্তা । তো নিরুপমাকে সেইরকম করেই শিখিয়েছেন। বরাবর পশ্চিমে ছিলেন, আমাদের কখনো তো বন্ধ করে রাখেন নি। তবু কলকাতার ছেলে কী রকম জানি নে। ভয় হয়, আমাদের ধরন-ধারণ দেখে হয়তো অভদ্র মনে করবে। তারা মেয়ের সঙ্গে শেকহ্যান্ড করে না কি, কে জানে ! হয়তো ইংরেজিতে গুডমৰ্নিং বলে ! শুনেছি তাদের নিজের হাতে চুরুট জ্বলিয়ে দিতে হয়— এ-সব তো পারব না। ঘটক বললে, ছেলেটি হ্যাট-কোট পরে। আমার মেয়ে আবার ফিরিঙ্গির সাজ দু চক্ষে দেখতে পারে না। কী রকম যে হবে, বুঝতে পারছি নে। মন্ত্র পড়ে বিয়ে করতে রাজি হবে তো ? ভৃত্য। মােঠাকরুন, একটি বাবু এসেছেন। আমি তাকে বললেম বাড়িতে পুরুষমানুষ কেউ নেই। তিনি বললেন, তিনি মার সঙ্গেই দেখা করতে এসেছেন । । শ্যামা। তবে ঠিক হয়েছে। সেই ছেলেটি এসেছে। ডেকে নিয়ে আয় । (ভূত্যের প্রস্থান) ভয় হচ্ছে- কলকাতার ছেলে, তার সঙ্গে কিরকম করে চলতে হবে! কী জানােয়ারই মনে করবে ! W8Š 9|(Krej শ্যামাসুন্দরীর পায়ের কাছে একটি গিনি রাখিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্ৰণাম । শ্যামা। (স্বগত) এ যে প্ৰণামী দিয়ে প্ৰণাম করলে গো ! এ তো শেকহ্যান্ড করে না। বাচালে ! লক্ষ্মী ছেলে ! কেমন ধুতিচাদর পরে এসেছে ! আশু । মাতাজি, আমাকে যে আপনি দর্শন দেবেন, এ আমি আশা করি নি। বড়ো অনুগ্রহ করেছেন । ኳ፡ শাম। সেয়েহে পপুলকে) কে বা তুমি আমার চেলের মতে, তােমাকে দেখা দিতে মােৰ আশু । স্নেহ রাখবেন। আশীর্বাদ করবেন, এই অনুগ্রহ থেকে কখনো বঞ্চিত না হই। শ্যামা । বাবা, তোমার কথা শুনে আমার কান জুড়োল, আমি নিশ্চয়ই অনেক তপস্যা করেছিলেম, তাই আশু । মাতাজি, আপনি তপস্যার দ্বারা যে নিরুপমা-সম্পদ লাভ করেছেন, আমাকে তারশ্যাম । তোমাকে দেবার জন্যেই তো প্ৰস্তুত হয়ে এসেছি। অনেক সন্ধান করে যোগ্যপাত্র পেয়েছি, এখন দিতে পারলেই তো নিশ্চিন্ত হই । আশু । (শ্যামার পদধূলি লইয়া) মািতজি, আমাকে কৃতাৰ্থ করলেন ; এত সহজেই যে ফললাভ করব, এ আমি স্বপ্নেও জানতুম না। শ্যামা । বল কী বাবা, তোমার আগ্রহ যত আমার আগ্রহ তার চেয়ে বেশি । আশু । তা হলে যে কামনা করে এসেছিলেম, আজ কি তার কিছু পরিচয়— শ্যামা | পরিচয় হবে বৈকি বাবা, আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই। আশু । আপত্তি নেই মাতাজি ? শুনে বড়ো আরাম পেলেমশ্যামা। দেখাশুনা সমস্তই হবে বাবা, আগে কিছু খেয়ে নাও । আশু । আবার খাওয়া ! আপনি আমাকে যথার্থ জননীর মতোই স্নেহ দেখালেন। শ্যাম । তুমিও আমাকে মার মতোই দেখবে, এই আমার প্রাণের ইচ্ছা । আমার তো ছেলে নেই, তুমিই আমার ছেলের মতো থাকবে । আহার্য লইয়া ভূত্যের প্রবেশ আশু । করেছেন কী ! এত আয়োজন ! ! শ্যামা। আয়োজন আর কি করলেম ? আজই ঠিক আসতে পারবে কি না মনে একটু সন্দেহ ছিল— তাই—