পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শারদোৎসব। V9brዓ উপনন্দ । আমার মতো ছেলেকে তিনি কি দাম দিয়ে কিনবেন ? সন্ন্যাসী। বাবা, বিনামূল্যে কেনবার মতো ক্ষমতা তীর যদি থাকে তা হলে বিনা মূল্যেই কিনবেন। কিন্তু তোমার ঋণটুকু শোধ করে না দিতে পারলে তঁার এত ঋণ জমবে যে তার রাজভাণ্ডার লজ্জিত হবে, এ আমি তোমাকে সত্যই বলছি। উপনন্দ । ঠাকুর, এও কি সম্ভব ? সন্ন্যাসী । বাবা, জগতে কেবল কি এক লক্ষেশ্বরই সম্ভব ? তার চেয়ে বড়ো সম্ভাবনা কি। আর-কিছুই নেই ? উপনন্দ । আচ্ছ, যদি সে সম্ভব হয় তো হবে, কিন্তু আমি ততদিন পুঁথিগুলি নকল করে কিছু কিছু শোধ করতে থাকি ; নইলে আমার মনে বড়ো গ্লানি হচ্ছে। সন্ন্যাসী । ঠিক কথা বলেছ বাবা। বােঝা মাথায় তুলে নাও, কারও প্রত্যাশায় ফেলে রেখে সময় । বইয়ে দিয়ে না । ] 事 উপনন্দ । তা হলে চললেম ঠাকুর । তোমার কথা শুনে আমি মনে কত যে বল পেয়েছি সে আমি বলে উঠতে পারি নে। ] সন্ন্যাসী | তোমাকে দেখে আমিও যে কত বললাভ করেছি। সে কথা কেমন করে বুঝবে ? এক কাজ করে বাবা, আমার খেলার দলটি ভেঙে গিয়েছে, আবার তাদের সকলকে ডেকে নিয়ে এসো ( | উপনন্দ । তা আনছি। কিন্তু ঠাকুর, তোমার দলটিকে আমার পুঁথি নকল করার কাজে লাগালে চলবে না। তারা আমার সব নষ্ট করে দেয় ; এত খুশি হয়ে করে যে বারণ করতেও পারি নে। লক্ষেশ্বরের প্রবেশ [প্ৰস্থান লক্ষেশ্বর । ঠাকুর, অনেক ভেবে দেখলেম- পারব না । তোমার চেলা হওয়া আমার কর্ম নয়। যা পেয়েছি তা অনেক দুঃখে পেয়েছি, তোমার এক কথায় সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে শেষকালে হায় হায় করে মরব ! আমার বেশি আশায় কােজ নেই। সন্ন্যাসী। সে কথাটা বুঝলেই হল। লক্ষেশ্বর । ঠাকুর, এবার একটুখানি উঠতে হচ্ছে। সন্ন্যাসী। (উঠিয়া) তা হলে তোমার কাছ থেকে ছুটি পাওয়া গেল! লক্ষেশ্বর। (মাটি ও শুষ্কপত্র সরাইয়া কীেটা বাহির করিয়া) ঠাকুর, এইটুকুর জন্যে আজ সকাল থেকে সমস্ত হিসাব-কিতাব ফেলে রেখে এই জায়গাটার চারদিকে ভূতের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি। এই যে গজমোতি, এ আমি তোমাকেই আজ প্রথম দেখালেম ; আজ পর্যন্ত কেবলই এটাকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়িয়েছি ; তোমাকে দেখাতে পেরে মনটা তবু একটু হালকা হল । (সন্ন্যাসীর হাতের কাছে অগ্রসর করিয়াই, তাড়াতাড়ি ফিরাইয়া লইয়া)-না, হল না! তােমাকে যে এত বিশ্বাস করলেম, তবু এ জিনিস একটিবার তোমার হাতে তুলে দিই। এমন শক্তি আমার নেই। এই যে আলোতে এটাকে তুলে ধরেছি, আমার বুকের ভিতর যেন গুরুগুরু করছে। আচ্ছা ঠাকুর, বিজয়াদিত্য কেমন লোক বলে। তো। তাকে বিক্রি করতে গেলে সে তো দাম না দিয়ে এটা আমার কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেবে না ? আমার ঐ এক মুশকিল হয়েছে। আমি এটা বেচতেও পারছি নে, রাখতেও পারছি নে, এর জন্যে আমার রাত্রে ঘুম হয় না। বিজয়াদিত্যকে তুমি বিশ্বাস করা ? r সন্ন্যাসী । সব সময়েই কি তাকে বিশ্বাস করা যায় ? লক্ষেশ্বর। সেই তো মুশকিলের কথা। আমি দেখছি। এটা মাটিতেই পেঁপাতা । श्लै९ কোনদিন মরে যাব, কেউ সন্ধানও পাবে না। r সন্ন্যাসী। রাজাও না, সম্রাটও'না, ঐ মাটিই সব ফাকি দিয়ে নেবে। তোমাকেও নেবে, আমাকেও (न । نه