পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○8 ፥፡ রবীন্দ্র-রচনাবলী ইশা খা । ওঁর বুদ্ধিটা সম্প্রতি বড়োই বেড়ে উঠেছে। ইন্দ্ৰকুমার। নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না, মই লাগাতে হবে। অনুচরসহ যুবরাজ চন্দ্ৰমাণিক্য ও মহারাজ অমরমাণিক্যের প্রবেশ রাজধর । মহারাজের কাছে আমার নালিশ আছে । মহারাজ। কী হয়েছে ? রাজধর । ইশা খাঁ পুনঃপুনঃ নিষেধসত্ত্বে আমার অসম্মান করেন। এর বিচার করতে হবে। ইশা খা । অসম্মান কেউ করে না, অসম্মান তুমি করাও । আরো তো রাজকুমার আছেন। তারাও মনে রাখেন। আমি তাদের গুরু, আমিও মনে রাখি তারা আমার ছাত্ৰ— সম্মান-অসম্মানের কোনো কথাই ওঠে না । মহারাজ ! সেনাপতি সাহেব, কুমারদের এখন বয়স হয়েছে, এখন ওঁদের মান রক্ষা করে চলতে হবে বৈকি । * ইশা খা । মহারাজ যখন আমার কাছে যুদ্ধ শিক্ষা করেছেন তখন মহারাজকে যেরকম সম্মান করেছি। রাজকুমারদের তা অপেক্ষা কম করি নে। রাজধর । অন্য কুমারদের কথা বলতে চাই নে, কিন্তুইশা খা । চুপ করো বৎস । আমি তোমার পিতার সঙ্গে কথা কছি। মহারাজ, মাপ করবেন, রাজবংশের এই কনিষ্ঠ পুত্রটি বড়ো হলে মুনশির মতো কলম চালাতে পারবে, কিন্তু তলোয়ার এর হাতে শোভা পাবে না । (যুবরাজ এবং ইন্দ্ৰকুমারকে দেখাইয়া) চেয়ে দেখুন মহারাজ, এরাই তো মহারাজ ! রাজধর, খা সাহেব কী বলছেন ! তুমি অস্ত্রশিক্ষায় ওঁকে সন্তুষ্ট করতে পার নি ? রাজধর ; সে আমার ভাগের দোষ, অস্ত্ৰশিক্ষার দোষ নয় ; মহারাজ নিজে আমাদের ধনুবিদ্যার পরীক্ষা গ্রহণ করুন, এই আমার প্রার্থনা | মহারাজ ; আচ্ছা, উত্তম । কাল আমাদের অবসর আছে, কালই পরীক্ষা হবে । তোমাদের মধ্যে যে জিতবে তাকে আমার এই হীরে-বাধানো তলোয়ার পুরস্কার দেব | [প্ৰস্থান ইশা খা । শাবাশ রাজধর, শাবাশ ! আজি তুমি ক্ষত্ৰিয়াসন্তানের মতে কথা বলেছ। অস্ত্রপরীক্ষায় যদি তুমি হার তাতেও তোমার গৌরব নষ্ট হবে না । হার-জিত তো আল্লার ইচ্ছা, কিন্তু ক্ষত্ৰিয়ের মনে স্পর্ধা থাকা চাই । রাজধর । থাক সেনাপতি, তোমার বাহবা অন্য রাজকুমারদের জন্য জমা থােক ; এত দিন তা না পেয়েও যদি চলে গিয়ে থাকে। তবে আজও আমার কােজ নেই | যুবরাজ । রাগ কোরো না ভাই রাজধর । সেনাপতি সাহেবের সরল ভৎসনা ওঁর সাদা দাড়ির মতো সমস্তই কেবল ওঁর মুখে । কোনো একটি গুণ দেখলেই তৎক্ষণাৎ উনি সব ভুলে যান। অস্ত্রপরীক্ষায় যদি তোমার জিত হয় তা হলে দেখবে, খা সাহেব তোমাকে যেমন মনের সঙ্গে পুরস্কৃত করবেন। এমন আর কেউ নয় । রাজধর । দাদা, আজ পূর্ণিমা আছে, আজ রাত্রে যখন গোমতী নদীতে বাঘে জল খেতে আসবে তখন শিকার করতে গেলে হয় না ? ? যুবরাজ ( বেশ কথা । তোমার যদি ইচ্ছে হয়ে থাকে তো যাওয়া যাবে। ইন্দ্ৰকুমার। কী আশ্চর্য!!! রাজধরের যে শিকারে প্রবৃত্তি হল ! এমন তো কখনো দেখা যায় নি। ইশা খাঁ ! ওঁর আবার শিকারে প্রবৃত্তি নেই!! উনি সকলের চেয়ে বড়ো জীব শিকার করে বেড়ান। রাজসভায় দুই পা-ওয়ালা এমন একটি জীব নেই যিনি ওঁর কোনো-না-কোনো ফাঁদে আটকা না পড়েছেন ।