পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8y \Vt রবীন্দ্র-রচনাবলী যুবরাজ ! এইটেই কি সকলের চেয়ে মনে রাখবার কথা ! মুকুটটাও যদি জলে গিয়ে থাকে। তবে ওর সমস্ত লাঞ্ছনাও যাক । তোমারও যা ভোলবার ভোলো, আমাদেরও যা ভোলবার ভুলে যাই |—— দেখি, ইন্দ্ৰকুমার সত্যিই রাগ করে আমাদের ছেড়ে চলে গেল কি না। পঞ্চম দৃশ্য রাজধার ও ধুরন্ধর রাজধর ধুরন্ধর, আমার মুকুট যেখানে গিয়েছে আমাদের যুদ্ধজয়কেও সেই কর্ণফুলির জলে জলাঞ্জলি দেব । ধুন্ধর আবার হারবে নাকি ? রাজধর হা, এবার হেরে জিতব ! ইন্দ্ৰকুমারের অহংকারকে ধূলোয় না লুটিয়ে দিয়ে আমি ফিরব না । আমার হাতের জিতকে তিনি গ্রহণ করবেন না ! দেখি, এবার নিজে তিনি কেমন জিততে পারেন । ধুন্ধর অন্ত বেশি নিশ্চিন্ত হােয়ে না, দৈবাৎ জিতে যেতেও পারে ; সতি কথায় রাগ করলে চলবে না, যুদ্ধবিদ্যাট ইন্দ্ৰকুমার একটু শিখেছে। রাজধর । আচ্ছা, সে-সব তর্ক পরে হবে । এখন তোমাকে একটি কাজ করতে হবে । আরাকান-রাজ সৈন্য নিয়ে কাল প্রাতেই যাত্রা করবেন । কথা আছে যতদিন না। তিনি চট্টগ্রামের সীমানা পেরিয়ে যাবেন ততদিন তার সেনাপতিরা আমার শিবিরে বন্দী থাকবেন । তিনি শিবির তোেলবার পূর্বেই আজ রাত্রে গোপনে তার কাছে তুমি আমার এই চিঠিখনি নিয়ে যাবে। ধুন্ধর ; চিঠিতে কী আছে সেটা তো আমার জানা ভালো ; কেননা, যদি দুটা-একটা কথা বলবার দরকার হয় তা হলে ব'লে কাজটা চুকিয়ে আসতে পারব | রাজধর আমি লিখেছি আমি অপমানিত হয়েছি, এইজন্য আমার ভাইদের কাছ থেকে আমি দাদার উপর অভিমান করে চলে গেছে, সৈন্যেরাও যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে জেনে ফেরবার জনো প্রস্তুত হচ্ছে- এই অবকাশে যদি আরাকান-রাজ সহসা আক্রমণ করেন তা হলে ত্রিপুরার সৈন্যদের নিশ্চয় হার হবে । ধুরন্ধর হার তো হবে । তার পরে ? তুমি-সৃদ্ধ শেষে হায় হায় করে মরবে না তো ! আগুন যদি লাগাতে হয় তো নিজের ঘরের চালটা সামলে লাগাতে হবে । রাজধর ; আমাকে সাবধান করে দেবার জন্যে আর-কারও বুদ্ধির প্রয়োজন হবে না। তুমি প্রস্তুত হও গো— দেখো, কেউ যেন জানতে না পারে। আমার সৈন্যেরা যদি কোনোমতে সন্দেহ করে তা হলে সমস্তই পাণ্ড হবে । ধুরন্ধর । দেখে রাজধর, আমাকে সাবধান করে দেবার জন্যেও আর-কারও বুদ্ধির প্রয়োজন হবে না- তুমি নিশ্চিন্ত থাকে।