পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२७ রবীন্দ্র-রচনাবলী ইহার কোনো উত্তর না দিয়া আমি বলিয়া উঠিলাম, এরা যে বলে আপনি নাস্তিক, সে কি সত্য ? भीभं निक्, ई, ऊठशि नाठिक । আমার মাথা নিচু হইয়া গেল। আমি মেসের লোকের সঙ্গে ঝগড়া করিয়াছিলাম যে, শচীশ কখনোই নাস্তিক হইতে পারে না। শচীশ সম্বন্ধে গোড়াতেই আমি দুইটা মন্ত ঘা খাইয়াছি। আমি তাহাকে দেখিয়াই মনে করিয়ছিলাম, সে ব্ৰাহ্মণের ছেলে। মুখখানি যে দেবমূর্তির মতো সাদা-পাথরে কোদা। তার উপাধি শুনিয়াছিলাম মল্লিক ; আমাদেরও গীয়ে মল্লিক-উপাধিধারী এক ঘর কুলীন ব্ৰাহ্মণ আছে। কিন্তু জানিয়াছি, শচীশ সোনার-বেনে । আমাদের নিষ্ঠাবান কায়ন্থের ঘর- জাতি-হিসাবে সোনার-বেনেকে অন্তরের সঙ্গে ঘূণা করিয়া থাকি। আর, নাস্তিককে নরঘাতকের চেয়ে, এমনকি, গো-খাদকের চেয়েও কোনো কথা না বলিয়া শচীশের মুখের দিকে চাহিয়া রহিলাম। তখনো দেখিলাম মুখে সেই জ্যোতি, যেন অন্তরের মধ্যে পূজার প্রদীপ জ্বলিতেছে। কেহ কোনােদিন মনে করিতে পারিত না আমি কোনাে জন্মে সোনার-বেনের সঙ্গে একসঙ্গে আহার ठ्ठा नक्षण आग्न ’ या काळ शब्देश ॐ का या व्या डाव i উইলকিনস আমাদের কলেজের সাহিত্যের অধ্যাপক। যেমন র্তার পণ্ডিত্য, ছাত্রদের প্রতি তেমনি তঁর অবজ্ঞা । এদেশী কলেজে বাঙালি ছেলেকে সাহিত্য পড়ানো শিক্ষকতার কুলিমজুরি করা, ইহাই ষ্ঠার ধারণা। এইজন্য মিলটন-শেকসপীয়র পড়াইবার ক্লাসেও তিনি ইংরেজি বিড়াল শব্দের প্রতিশব্দ বলিয়া দিতেন ; মার্জারজাতীয় চতুষ্পদ, a quadruped of feline species | কিন্তু নোট লওয়া সম্বন্ধে শচীশের মাপ ছিল। তিনি বলিতেন, শচীশ, তােমাকে এই ক্লাসে বসিতে হয় সে লােকসান আমি পূরণ করিয়া দিব, তুমি আমার বাড়ি যাইয়াে, সেখানে তোমার মুখের স্বাদ ফিরাইতে পরিবে । ছাত্রেরা রাগ করিয়া বলিত, শচীশকে সাহেব যে এত পছন্দ করে তার কারণ ওর গায়ের রঙ কটা, আর ও সাহেবের মন ভোলাইবার জন্য নাস্তিকতা ফলাইয়া থাকে । তাহদের মধ্যে কোনো কোনো বুদ্ধিমান আড়ম্বর করিয়া সাহেবের কােছ হইতে পজিটিভিজম সম্বন্ধে বই ধার চাহিতে গিয়াছিল ; সাহেব বলিয়াছিলেন, তোমরা বুঝিবে না। তারা যে নাস্তিকতা-চৰ্চারও অযোগ্য এই কথায় নাস্তিকতা এবং শচীশের বিরুদ্ধে তাঁহাদের ক্ষোভ কেবল বাড়িয়া উঠিতেছিল। ܔ মত এবং আচরণ সম্বন্ধে শচীশের জীবনে নিন্দার কারণ যাহা যাহা আছে তাহা সংগ্ৰহ করিয়া আমি লিখিলাম। ইহার কিছু আমার সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের পূর্বেকার অংশ, কিছু অংশ পরের। জগমোহন শচীশের জ্যাঠা । তিনি তখনকার কালের নামজাদা নাস্তিক । তিনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করিতেন বলিলে কম বলা হয়, তিনি না-ঈশ্বরে বিশ্বাস করিতেন। যুদ্ধজাহাজের কাপ্তেনের যেমন জাহাজ চালানোর চেয়ে জাহাজ ডোবানেই বড়ো ব্যাবসা, তেমনি যেখানে সুবিধা সেইখনেই সাির্মত ভুইয়া দণ্ডই জগমােহন হছিল। পরবাসীর সঙ্গ তিন ঐ পদ্ধতিতে গুৰু ঈশ্বর যদি থাকেন তবে আমার বুদ্ধি তীরই দেওয়া ; সেই বুদ্ধি বলিতেছে যে, ঈশ্বর নাই; ” অতএব ঈশ্বর বলিতেছেন যে, ঈশ্বর নাই ; অথচ, তোমরা তার মুখের উপর জবাব দিয়া বলিতেছ যে, ঈশ্বর আছেন। এই পাপের শান্তিস্বরূপে তেত্রিশ কোটি দেবতা তোমাদের দুই কান ধরিয়া জরিমানা আদায় করিতেছে।