পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ዩ98 রবীন্দ্ররচনাবলী । প্রাপ্য উদ্ধার করিয়া লইবে, এই তার একান্ত মনের সংকল্প হইয়া উঠিল। তখন তিনি নিজে টাকা সাহায্য করিয়া ননির একটা মিথ্যা মা খাড়া করিয়া জগমোহনের কাছে নাকী কান্না কঁদিবার জন্য পুষ্টান। জগমােহন তাকে এনে উল মুঠি ধৰিয়া অভ্র করেন যে সে আর সে দার s ননি দিনে দিনে মান হইয়া যেন ছায়ার মতো হইয়া মিলাইয়া যাইবার উপক্ৰম করিতেছে। তখন ক্রিস্টমাসের ছুটি । জগমোহন এক মুহুর্ত ননিকে ছাড়িয়া বাহিরে যান না। ' একদিন সন্ধ্যার সময়ে তিনি তাকে স্কটের একটা গল্প বাংলা করিয়া পড়িয়া শুনাইতেছেন, এমন সময়ে ঘরের মধ্যে পুরন্দর আর-একজন যুবককে লইয়া ঝড়ের মতো প্রবেশ করিল। তিনি যখন পুলিস ডাকিবার উপক্ৰম করিতেছেন এমন সময়ে সেই যুবকটি বলিল, আমি ননির ভাই, আমি উহাকে লাইতে আসিয়াছি। - i জগমোহন তার কোনো উত্তর না করিয়া পুরন্দরকে ঘাড়ে ধরিয়া ঠেলিতে ঠেলিতে সিঁড়ির কাছ পর্যন্ত লইয়া গিয়া এক ধাক্কায় নীচের দিকে রওনা করিয়া দিলেন । অন্য যুবকটিকে বলিলেন, পাষণ্ড, লজ্জা নাই তোমার ? নানিকে রক্ষা করিবার বেলা তুমি কেহ নও, আর সর্বনাশ করিবার বেলা তুমি ননির ভাই ? সে লোকটি প্রস্থান করিতে বিলম্ব করিল না, কিন্তু দূর হইতে চীৎকার করিয়া বলিয়া গেল, পুলিসের সাহায্যে সে তার বোনকে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাইবে । এ লোকটা সত্যই ননির ভাই বটে। শচীশই যে ননির পতনের কারণ সেই কথা প্রমাণ করিবার জন্য পুরন্দর তাহাকে ডাকিয়া আনিয়াছিল। ননি মনে মনে বলিতে লাগিল, ধরণী, দ্বিধা হও । V জগমােহন শচীশকে ডাকিয়া বলিলেন, ননিকে লইয়া আমি পশ্চিমে কোনাে-একটা শহরে চলিয়া যাই ; সেখানে যা-হয় একটা জুটাইয়া লইব ; যেরূপ উৎপাত আরম্ভ হইয়াছে এখানে থাকিলে ও মেয়েটা আর বঁচিবে না । শচীশ কহিল, দাদা যখন লাগিয়াছেন তখন যেখানে যাও উৎপাত সঙ্গে সঙ্গে চলিবে । তবে উপায় ? উপায় আছে। আমি ননিকে বিবাহ করিব । ” বিবাহ করিবে ? ... + ই, সিভিল বিবাহের আইন-মতে । জগমোহন শচীশকে বুকে চাপিয়া ধরিলেন। র্তার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল । এমন অশ্রুপাত তীর বয়সে আর কখনো তিনি করেন নাই । । Wi বাড়ি-বিভাগের পর হরিমোহন একদিনও জগমােহনকে দেখিতে আসেন নাই। সেদিন উন্ধে খুষ্কো আলুথালু হইয়া আসিয়া উপস্থিত। বলিলেন, দাদা, এ কী সর্বনাশের কথা শুনিতেছি ? জগমোহন কহিলেন, সর্বনাশের কথাই ছিল, এখন তাহা হইতে রক্ষার উপায় হইতেছে। দাদা, শচীশ তোমার ছেলের মতো- তার সঙ্গে ঐ পতিতা মেয়ের তুমি বিবাহ দিবে ? শচীশকে আমি ছেলের মতাে করিয়াই মানুষ করিয়াছি ; আজ তা আমার সার্থক হইল, সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করিয়াছে। দাদা, আমি তোমার কাছে হার মানিতেছি—আমার আয়ের অর্ধ অংশ আমি তোমার নামে লিখিয়া দিতেছি ; আমার উপরে এমন ভয়ানক করিয়া শোধ তুলিয়ে না। : জগমোহন চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া দাড়াইয়া বলিলেন, বােট ! তুমি তোমার ঐটাে পাতের অর্ধেক আমাকে দিয়া কুকুর ভুলাইতে আসিয়াছ! আমি তোমার মতো ধাৰ্মিক নই, আমি নাস্তিক, সে কথা মনে রাখিয়ো । আমি রাগের শোধও লই না, অনুগ্রহের ভিক্ষাও লই না।