পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুরঙ্গ । 8 ছোটাে ছেলে যেমন মুক্তি পায় মায়ের কোলে । দিনের বেলাকার সে মুক্তি তো ভোগ করিয়াছি, এখন রাতের বেলাকার এ মুক্তিই বা ছাড়ি কেন ? এ দুটাে ব্যাপারই সেই আমার এক জ্যাঠামশায়েরই কাণ্ড এ তুমি নিশ্চয় জানিয়ো । আমি বলিলাম, যাই বল, এই তামাক সাজানো পা-টেপানো এ-সমস্ত উপসর্গ জ্যাঠামশায়ের ना- भूख्नि 0 (5शनों नक्ष। 略 শচীশ কহিল, সে যে ছিল ডাঙার উপরকার মুক্তি, তখন কাজের ক্ষেত্রে জ্যাঠামশায় আমার হাত-পাকে সচল করিয়া দিয়াছিলেন। আর এ যে রসের সমুদ্র, এখানে নীেকার বঁাধনই যে মুক্তির রাস্তা। তাই তো গুরু আমাকে এমন করিয়া চারি দিক হইতে সেবার মধ্যে আটকাইয়া ধরিয়াছেন ; আমি পা টিপিয়া পার হইতেছি। আমি বলিলাম, তোমার মুখে এ কথা মন্দ শোনায় না, কিন্তু যিনি তোমার দিকে এমন করিয়া পা বাড়াইয়া দিতে পারেন তিনি শচীশ কহিল, তীর সেবার দরকার নাই বলিয়াই এমন করিয়া পা বাড়াইয়া দিতে পারেন, যদি দরকার থাকিত তবে লজ্জা পাইতেন । দরকার যে আমারই । বুঝিলাম, শচীশ এমন-একটা জগতে আছে আমি যেখানে একেবারে নাই। মিলনমাত্র যে-আমাকে শচীশ বুকে জড়াইয়া ধরিয়াছিল সে-আমি শ্ৰীবিলাস নয়, সে-আমি সর্বভূতী ; সে-আমি একটা আইডিয়া । । v, এই ধরনের আইডিয়া জিনিসটা মদের মতো ; নেশার বিহ্বলতায় মাতাল যাকে-তাকে বুকে জড়াইয়া অশ্রুবর্ষণ করিতে পারে, তখন আমিই কী আর অন্যই কী । কিন্তু এই বুকে-জড়ানোতে মাতালের যতই আনন্দ থাক, আমার তো নাই ; আমি তো ভেদজ্ঞানবিলুপ্ত একাকারতা-বন্যার একটা (ाटभांड श्ठ bाई नां- उाभि (श उाभि । বুঝিলাম, তর্কের কর্ম নয়। কিন্তু শচীশকে ছাড়িয়া যাওয়া আমার সাধ্য ছিল না ; শচীশের টানে এই দলের স্রোতে আমিও গ্রাম হইতে গ্রামে ভাসিয়া বেড়াইতে লাগিলাম। ক্ৰমে ক্ৰমে নেশায় আমাকেও পাইল ; আমিও সবাইকে বুকে জড়াইয়া ধরিলাম, অশ্রুবর্ষণ করিলাম, গুরুর পা টিপিয়া দিতে লাগিলাম এবং একদিন হঠাৎ কী-এক আবেশে শচীশের এমন একটি অলৌকিক রূপ দেখিতে পাইলাম যাহা বিশেষ কোনো-একজন দেবতাতেই সম্ভব ! ( আমাদের মতো এতবড়ো দুটাে দুর্ধর্ষ ইংরেজিওয়ালা নাস্তিককে দলে জুটাইয়া লীলানন্দস্বামীর নাম চারি দিকে রাটিয়া গেল। কলিকতাবাসী তীর ভক্তেরা এবার তাকে শহরে আসিয়া বসিবার জন্য পীড়াপীড়ি করিতে লাগিল । তিনি কলিকাতায় আসিলেন । 政 শিবতোষ বলিয়া তীর একটি পরম ভক্ত শিষ্য ছিল। কলিকাতায় থাকিতে স্বামী তারই বাড়িতে থাকিতেন ; সমস্ত দলবল -সমেত তাহাকে সেবা করাই তার জীবনের প্রধান আনন্দ ছিল। সে মরিবার সময় অল্পবয়সের নিঃসন্তান স্ত্রীকে জীবনস্বত্ব দিয়া তার কলিকাতার বাড়ি ও সম্পত্তি গুরুকে দিয়া যায় ; তার ইচ্ছা ছিল এই বাড়িই কালক্রমে তাহদের সম্প্রদায়ের প্রধান তীর্থস্থল হইয়া উঠে। এই বাড়িতেই ওঠা গেল । গ্রামে গ্রামে যখন মাতিয়া বেড়াইতেছিলাম। সে এক রকম ভাবে ছিলাম, কলিকাতায় আসিয়া সে নেশা জমাইয়া রাখা আমার পক্ষে শক্ত হইল। এতদিন একটা রসের রাজ্যে ছিলাম, সেখানে বিশ্বব্যাপিনী নারীর সঙ্গে চিত্তব্যাপী পুরুষের প্রেমের লীলা চলিতেছিল ; গ্রামের গোরু-চরা মাঠ, খেয়াঘাটের বটচ্ছায়া, অবকাশের আবেশে ভরা মধ্যাহ্ন এবং ঝিল্লিরবে আকম্পিত সন্ধ্যাবেলাকার