পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুরঙ্গ Վ. 880 r গুরুজি প্রতি বছরে একবার করিয়া কোনো দুৰ্গম জায়গায় নির্জনে বেড়াইতে যাইতেন। মাঘ মাসে সেই ঠার সময় হইয়াছে। শচীশ বলিল, আমি সঙ্গে যাইব । আমি বলিলাম, আমিও যাইব । রসের উত্তেজনায় আমি একেবারে মজায় মজায় জীৰ্ণ হইয়া গিয়াছিলাম। কিছুদিন ভ্রমণের ক্লেশ এবং নির্জনে বাস আমার নিতান্ত দরকার ছিল। স্বামীজি দামিনীকে ডাকিয়া বলিলেন, মা, আমি ভ্ৰমণে বাহির হইব । অন্যবারে এই সময়ে যেমন তুমি তোমার মাসির বাড়ি গিয়া থাকিতে, এবারেও সেইরূপ বন্দোবস্ত করিয়া দিই। : দামিনী বলিল, আমি তোমার সঙ্গে যাইব । স্বামীজি কহিলেন, পরিবে কেন ? সে যে বড়ো শক্ত পথ । দামিনী বলিল, পারিব। আমাকে লইয়া কিছু ভাবিতে হইবে না। স্বামী দামিনীর এই নিষ্ঠায় খুশি হইলেন। অন্য অন্য বছর এই সময়টাই দামিনীর ছুটির দিন ছিল, সম্বৎসর ইহার জন্য তার মন পথ চাহিয়া থাকিত । স্বামী ভাবিলেন, এ কী অলৌকিক কাণ্ড । ভগবানের রসের রসায়নে পাথরকে নবনী করিয়া তোলে কেমন করিয়া ! কিছুতে ছাড়িল না, দামিনী সঙ্গে গেল। s সেদিন প্রায় ছয় ঘণ্টা রৌদ্রে হাঁটিয়া আমরা যে জায়গায় আসিয়া পড়িয়ছিলাম সেটা সমুদ্রের মধ্যে একটা অন্তরীপ ! একেবারে নির্জন নিস্তব্ধ ; নারিকেলবনের পল্লববীজনের সঙ্গে শাস্তপ্রায় সমুদ্রের অলস কল্লোল মিশিতেছিল। ঠিক মনে হইল, যেন ঘুমের ঘোরে পৃথিবীর একখানি ক্লান্ত হাত সমুদ্রের উপর এলাইয়া পড়িয়াছে। সেই হাতের তেলোর উপরে একটি নীলাভ সবুজ রঙের ছোটাে পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে অনেক কালের খোদিত এক গুহা আছে। সেটি বৌদ্ধ কি হিন্দু, তার গায়ে যে-সব মূর্তি তাহা বুদ্ধের না বাসুদেবের, তার শিল্পকলায় গ্ৰীকের প্রভাব আছে কি নাই, এ লইয়া পণ্ডিতমহলে গভীর একটা অশান্তির কারণ ঘটিয়াছে। কথা ছিল গুহা দেখিয়া আমরা লোকালয়ে ফিরিব। কিন্তু সে সম্ভাবনা নাই। দিন তখন শেষ হয়, তিথি সেদিন কৃষ্ণপক্ষের দ্বাদশী। গুরুজি বলিলেন, আজ এই গুহাতেই রাত কাটাইতে হইবে। " আমরা সমুদ্রের ধারে বনের তলায় বালুর পরে তিন জনে বসিলাম। সমুদ্রের পশ্চিম প্রান্তে সূর্যস্তটি আসন্ন অন্ধকারের সম্মুখে দিবসের শেষ প্ৰণামের মতো নত হইয়া পড়িল। গুরুজি গান ধরিলেন— আধুনিক কবির গানটা তার চলে পথে যেতে তোমার সাথে মিলন হল দিনের শেষে । দেখতে গিয়ে সঁাঝের আলো মিলিয়ে গেল এক নিমিষে । , ली भाई एन लिवि 9 शिश शिलिगि तिक्ता দেখা তোমায় হােক বা না হােক তাহার লাগি করব না শোক, ক্ষণেক তুমি দাড়াও- তোমার চরণ ঢাকি এলোকেশে । স্বামী যখন থামিলেন। সেই আকাশ-ভরা সমুদ্র-ভরা সন্ধ্যার স্তব্ধতা নীরব সুরের রসে একটি সোনালি রঙের পাকা ফলের মতো ভরিয়া উঠিল। দামিনী মাথা নত করিয়া প্ৰণাম করিলঅনেকক্ষণ মাথা তুলিল না, তার চুল এলাইয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়িল ।