পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88やり রবীন্দ্র-রচনাবলী রকমের কথা পাড়িলেন। খানিক দূর এগোতেই তিনি আমাদের মুখের দিকে তাকাইয়া একটা যেন ফাকা কিছু বুঝিলেন। দেখিলেন, আমরা অন্যমনস্ক । পিছন ফিরিয়া চাহিয়া দেখিলেন, দামিনী যেখানে বসিয়া জামায় বােতাম লগাইতেছিল। সেখানে সে নাই। বুঝিলেন, আমরা দুইজনে ঐ কথাটাই ভাবিতেছি যে, দামিনী উঠিয়া চলিয়া গেল। তার মনে ভিতরে ভিতরে ঝুমঝুমির মতো বার বার বাজিতে লাগিল যে দামিনী শুনিল না, তার কথা শুনিতেই চাহিল না । যাহা বলিতেছিলেন তার খেই হারাইয়া গেল। কিছুক্ষণ পরে আর থাকিতে পারিলেন না। দামিনীর ঘরের কাছে আসিয়া বলিলেন, দামিনী, এখানে একলা কী করিতেছ? ও ঘরে আসিবে না ? দামিনী কহিল, না, একটু দরকার আছে। গুরু উকি মারিয়া দেখিলেন, খাচার মধ্যে একটা চিল। দিন দুই হইল কেমন করিয়া টেলিগ্রাফের তারে ঘা খাইয়া চিলটা মাটিতে পড়িয়া গিয়াছিল, সেখানে কাকের দলের হাত হইতে দামিনী তাহাকে উদ্ধার করিয়া আনে, তার পর হইতে শুশ্ৰুষা চলিতেছে। এই তো গেল চিল। আবার দামিনী একটা কুকুরের বাচ্ছ জোটাইয়াছে, তার রূপও যেমন কৌলীন্যও তেমনি। সে একটা মূর্তিমান রাসভঙ্গ। করতালের একটু আওয়াজ পাইবামাত্র সে আকাশের দিকে মুখ তুলিয়া বিধাতার কাছে আর্তম্বরে নালিশ করিতে থাকে ; সে নালিশ বিধাতা শোনেন না বলিয়াই রক্ষা, কিন্তু যারা শোনে তাদের ধৈর্য থাকে না । একদিন যখন ছাদের কোণে একটা ভাঙা হাঁড়িতে দামিনী ফুলগাছের চর্চা করিতেছে এমন সময় শচীশ তাকে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আজকাল তুমি ওখানে যাওয়া একেবারে ছাড়িয়া দিয়াছ কেন ? কোনখানে ? গুরুজির কাছে । প্রয়োজন আমাদের কিছু নাই, কিন্তু তোমার তো প্রয়োজন আছে। দামিনী জ্বলিয়া উঠিয়া বলিল, কিছু না, কিছু না। শচীশ স্তম্ভিত হইয়া তার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। কিছুক্ষণ পরে বলিল, দেখো, তোমার মন अम्भालु श्शाgछ, शनेि भोलि °शऊ फ्रां७ ऊाद তোমরা আমাকে শান্তি দিবে ? দিনরাত্ৰি মনের মধ্যে কেবলই ঢেউ তুলিয়া তুলিয়া পাগল হইয়া আছ, তোমাদের শান্তি কোথায় ? জোড়হাত করি তোমাদের, রক্ষা করো আমাকে- আমি শান্তিতেই ছিলাম। আমি শান্তিতেই থাকিব । শচীশ বলিল, উপরে ঢেউ দেখিতেছি বটে, কিন্তু ধৈর্য ধরিয়া ভিতরে তলাইতে পারিলে দেখিবে সেখানে সমস্ত শান্ত । দামিনী দুই হাত জোড় করিয়া বলিল, ওগো, দোহাই তোমাদের, আমাকে আর তলাইতে বলিয়ে না। আমার আশা তােমরা ছাড়িয়া দিলে তবেই আমি বঁচিব।

  • ܔ

নারীর হৃদয়ের রহস্য জানিবার মতো অভিজ্ঞতা আমার হইল না। নিতান্তই উপর হইতে, বাহির হইতে, যেটুকু দেখিলাম তাঁহাতে আমার এই বিশ্বাস জন্মিয়াছে যে, যেখানে মেয়েরা দুঃখ পাইবে সেইখানেই তার হৃদয় দিতে প্রস্তুত। এমন পশুর জন্য তারা আপনার বরণমালা গীথে যে লোক সেই মালা কামনার পাকে দলিয়া বীভৎস করিতে পারে ; আর তা যদি না হইল। তবে এমন কারও দিকে তারা লক্ষ করে যার কণ্ঠে তাদের মালা পৌঁছায় না, যে মানুষ ভাবের সূক্ষ্মতায় এমনি মিলাইয়াছে যেন নাই বলিলেই হয় । মেয়েরা স্বয়ম্বারা হইবার বেলায় তাদেরই বর্জন করে যারা আমাদের মতো মাঝারি মানুষ, যারা স্কুলে সূক্ষ্মে মিশাইয়া তৈরি-নারীকে যারা নারী বলিয়াই জানে, অর্থাৎ, এটুকু জানে যে,