পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8७० রবীন্দ্র-রচনাবলী দামিনীর চােখে আগুন যত সহজে জ্বলে, জল তত সহজে পড়ে না। কিন্তু সেদিন যখন তাকে । দেখিলাম, দেখি সে মাটিতে পা ছড়াইয়া বসিয়া ; চোখ দিয়া জল পড়িতেছে। আমাকে দেখিয়া তার কান্না যেন বঁধ ভাঙিয়া ছুটিয়া পড়িল। আমার বুকের ভিতরটা কেমন করিতে লাগিল। আমি এক পাশে বসিলাম । একটু সে সুস্থ হইলে আমি তাকে বললাম, শচীশের শরীরের জন্য তুমি এত ভােব কেন ? দামিনী বলিল, আর কিসের জন্য আমি ভাবিতে পারি বলে। আর-সব ভাবনা তো উনি আপনিই ভাবিতেছেন। আমি কি তার কিছু বুঝি, না। আমি তার কিছু করিতে পারি ? : আমি বলিলাম, দেখো, মানুষের মন যখন অত্যন্ত জোরে কিছু একটাতে গিয়া ঠেকে তখন আপনিই তার শরীরের সমস্ত প্রয়োজন কমিয়া যায়। সেইজন্যই বড়ো দুঃখে কিংবা বড়ো আনন্দে মানুষের ক্ষুধাতৃষ্ণা থাকে না। এখন শচীশের যেরকম মনের অবস্থা তাতে ওর শরীরের দিকে যদি মন না দাও @द्ध कडि शेत ना | দামিনী বলিল, আমি যে স্ত্রীজাত— ঐ শরীরটাকেই তো দেহ দিয়া প্ৰাণ দিয়া গড়িয়া তোলা আমাদের স্বধর্ম। ও যে একেবারে মেয়েদের নিজের কীর্তি | তাই যখন দেখি শরীরটা কষ্ট পাইতেছে তখন এত সহজে আমাদের মন কাদিয়া উঠে । আমি বলিলাম, তাই যারা কেবল মন লইয়া থাকে শরীরের অভিভাবক তোমাদের তারা চােখেই দেখিতে পায় না | প্রাপ্ত হয় বলয় উঠল পঙ্কন যুক্ত। তার হার এলাকায় যে ন স কাে মনে মনে বলিলাম, সেই অনাসৃষ্টিটার পরে তোমাদের লোভের সীমা নাই। ওরে ও শ্ৰীবিলাস, জন্মান্তরে যেন সৃষ্টিছাড়ার দলে জন্ম নিতে পারিস এমন পুণ্য কর। \O সেদিন নদীর চরে শচীশ দামিনীকে আমন একটা শক্ত ঘা দিয়া তার ফল হইল, দামিনীর সেই কাতর দৃষ্টি শচীশ মন হইতে সরাইতে পারিল না। তার পর কিছুদিন সে দামিনীর পরে একটু বিশেষ যত্ন দেখাইয়া অনুতাপের ব্ৰত যাপন করিতে লাগিল। অনেক দিন সে তো আমাদের সঙ্গে ভালো করিয়া কথাই কয় নাই, এখন সে দামিনীকে কাছে ডাকিয়া তার সঙ্গে আলাপ করিতে লাগিল। যে-সব তার অনেক ধ্যানের অনেক চিন্তার কথা সেই ছিল তার আলাপের বিষয় । W দামিনী শচীশের ঔদাসীন্যকে ভয় করিত না, কিন্তু এই যত্নকে তার বড়ো ভয় । সে জনিত এতটা সহিবে না, কেননা এর দাম বড়ো বেশি । একদিন হিসাবের দিকে যেই শচীশের নজর পড়িবে, দেখিবে খরচ বড়ো বেশি পড়িতেছে, সেইদিনই বিপদ। শচীশ অত্যন্ত ভালো ছেলের মতো বেশ নিয়মমত স্নানাহার করে, ইহাতে দামিনীর বুক দূরদূর করে, কেমন তার লজ্জা বোধ হয়। শচীশ অবাধ্য হইলে সে যেন বীচে। সে মনে মনে বলে, সেদিন তুমি আমাকে দূর করিয়া দিয়াছিলে, ভালোই করিয়ােছ। আমাকে যত্ন এ যে তোমার আপনাকে শাস্তি দেওয়া । এ আমি সহিব কী করিয়া ? দামিনী ভাবিল, দূর হােক গে। ছাই, এখানেও দেখিতেছি মেয়েদের সঙ্গে সই পাতাইয়া আবার আমাকে পাড়া ঘুরিতে হইবে । একদিন রাত্রে হঠাৎ ডাক পড়িল, বিশ্ৰী ! দামিনী! তখন রাত্রি একটাই হইবে কি দুটাই হইবে শচীশের সে খেয়ালই নাই। রাত্রে শচীশ কী কাণ্ড করে তা জানি না- কিন্তু এটা নিশ্চয়, তার ७९शष्ठ 6छे छूए दgिऊ छूठ९ला अठिछ श्शा उठिशाश्। আমরা ঘুম হইতে ধড়ফড় করিয়া জাগিয়া বাহির হইয়া দেখি, শচীশ বাড়ির সামনে বাঁধানো চাতালটার উপর অন্ধকারে দাড়াইয়া আছে। সে বলিয়া উঠিল, আমি বেশ করিয়া বুঝিয়েছি। মনে একটুও সন্দেহ নাই।