পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুরঙ্গ 8V দামিনী আমাকে বলিল, শ্ৰীবিলাসবাবু, তুমি আমাকে কলিকাতায় পীেছাইয়া দিবে চলো। এটা যে দামিনীর পক্ষে কতবড়ো কঠিন কথা সে আমি বেশ জানি, কিন্তু আমি তাকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলাম না । ভারী একটা বেদনার মধ্যেও আমি আরাম পাইলাম। দামিনীর এখান হইতে যাওয়াই ভালো। পাহাড়টার উপর ঠেকিতে ঠেকিতে নীেকাটি চুরমার হইয়া গেল। লািগবের সদর দক্ষিীস্টশরে প্রশমকীয়াবলিল ইন্সলে আমার অপর কােছ মাপ 33 भूक व्लश् | দামিনীর মধ্যে একটা প্রলয়ের আগুন জ্বলিতেছে, কলিকাতার পথে আসিতে আসিতে তাহা বেশ বুঝিতে পারিলাম। তারই তাপ লাগিয়া আমারও মনটা যেদিন বড়ো বেশি তাতিয়া উঠিয়ছিল সেদিন আমি শচীশকে উদ্দেশ করিয়া কিছু কড়া কথা বলিয়ছিলাম। দামিনী রাগিয়া বলিল, দেখো, তুমি তার সম্বন্ধে আমার সামনে অমন কথা বলিয়ে না। তিনি আমাকে কী বীচান বঁাচাইয়াছেন তুমি তার কী জান ? তুমি কেবল আমারই দুঃখের দিকে তাকাও, আমাকে বীচাইতে গিয়া তিনি যে দুঃখটা । পাইয়াছেন সে দিকে বুঝি তোমার দৃষ্টি নাই ? সুন্দরকে মারিতে গিয়াছিল। তাই অসুন্দরটা বুকে লাথি খাইয়াছে। বেশ হইয়াছে, বেশ হইয়াছে, খুব ভালো হইয়াছে— বলিয়া দামিনী বুকে দম দম করিয়া কিল মারিতে লাগিল। আমি তার হাত চাপিয়া ধরিলাম। : কলিকাতায় সন্ধ্যার সময় আসিয়া তখনই দামিনীকে তার মাসির বাড়ি দিয়া আমি আমার এক পরিচিত মেসে উঠিলাম। আমার জানা লোকে যে আমাকে দেখিল চমকিয়া উঠিল ; বলিল, এ কী ! তোমার অসুখ করিয়াছে না কি ? . পরদিন প্রথম ডাকেই দামিনীর চিঠি পাইলাম, আমাকে লইয়া যাও, এখানে আমার স্থান নাই। মাসি দামিনীকে ঘরে রাখিবে না। আমাদের নিন্দায় নাকি শহরে টাঢ়ি পড়িয়া গেছে। আমরা দল ছাড়ার অল্পকাল পরে সাপ্তাহিক কাগজগুলির পূজার সংখ্যা বাহির হইয়াছে; সুতরাং আমাদের হাড়কাঠ তৈরি ছিল, রক্তপাতের ত্রুটি হয় নাই। শাস্ত্ৰে স্ত্রীপশু-বলি নিষেধ, কিন্তু মানুষের বেলায় ঐটতেই সব চেয়ে উল্লাস। কাগজে দামিনীর স্পষ্ট করিয়া নাম ছিল না, কিন্তু বদনামটা কিছুমাত্র অস্পষ্ট যাতে না হয় সে কৌশল ছিল। কাজেই দূর সম্পর্কের মসির বাড়ি দামিনীর পক্ষে ভয়ংকর আঁট হইয়া উঠিল । ইতিমধ্যে দামিনীর বাপ মা মারা গেছে, কিন্তু ভাইরা কোহ-কেহ আছে বলিয়াই জানি। দামিনীকে তাদের ঠিকানা জিজ্ঞাসা করিলাম। সে ঘাড় নাড়িল ; বলিল, তারা বড়ো গরিব । আসল কথা, দামিনী তাদের মুশকিলে ফেলিতে চায় নাৰী ভয় ছিল, ভাইরাও পাছে জবাব দেয় ‘এখানে জায়গা নাই । সে আঘাত যে সহিবে না। জিজ্ঞাসা করিলাম, তা হইলে কোথায় যাইবে ? দামিনী বলিল, লীলানন্দস্বামীর কাছে | •ኣ লীলানন্দস্বামী ! খানিকক্ষণ আমার মুখ দিয়া কথা বাহির হইল না। অদৃষ্ট্রের এ কী নিদারুণ লীলা ! বলিলাম, স্বামীজি কি তোমাকে লাইবেন ? দামিনী বলিল, খুশি হইয়া লইবেন। দামিনী মানুষ চেনে। যারা দলচরের জাত মানুষকে পাইলে সত্যকে পাওয়ার চেয়ে তারা বেশি খুশি হয়। লীলানন্দস্বামীর ওখানে দামিনীর জায়গার টানাটানি হইবে না এটা ঠিক— কিন্তু— ঠিক এমন সংকটের সময় বলিলাম, দামিনী, একটি পথ আছে, যদি অভয় দাও তো বলি । দামিনী বলিল, বলো, শুনি । আমি বলিলাম, যদি আমার মতো মানুষকে বিবাহ করা তোমার পক্ষে সম্ভব হয়, তবেমািট আমার ধর্মীয়া দিয়া বলি, ও কী কথা বলতে ইকিলসবন্ত ? তুমি কি পাগল