পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8obr রবীন্দ্র-রচনাবলী সে কথা শুনে তিনি বললেন, যেখানে তোমার নিজের একটু কোথাও বাজে সেইখনেই বুঝি তোমার যত দয়া, আর যেখানে ওদের জীবনের এপিঠ-ওপিঠ ফুড়ে সমাজের শেল বিধেছে। সেখানে দয়া করবার কিছু নেই ? যারা পেটেও খাবে না। তারাই পিঠেও সাইবে ? হবে, হবে, আমারই মন ছােটাে। আর সকলেই ভালো, কেবল আমি ছাড়া। রাগ করে বললুম, তোমাকে তো ভিতরে থাকতে হয় না, সব কথা জান না- এই বলে আমি তাকে ও-মহলের একটা আছেন । আমি বসে বসে কঁদিতে লাগলুম। স্বামীর কাছে এমন ছােটাে প্রমাণ হয়ে গেলে বীচি কী করে ? আমার ভাগ্য যদি বঞ্চিত হত তা হলেও আমি যে কখনো ওদের মতো এমনতরো হতুম না সে তো প্রমাণ করবার জো নেই । দেখাে, আমার এক-একবার মনে হয় রূপের অভিমানের সুযোগ বিধাতা যদি মেয়েদের দেন, তবে অন্য অনেক অভিমানের দুৰ্গতি থেকে তারা রক্ষা পায়। হীরে-জহরতের অভিমান করাও চলত, কিন্তু রাজার ঘরে তার কোনো অর্থই নেই। তাই আমার অভিমান ছিল সতীত্বের । সেখানে আমার স্বামীকেও হার মানতে হবে এটা আমার মনে ছিল । কিন্তু যখনই সংসারের কোনো খিটিমিটি নিয়ে তার সঙ্গে কথা কইতে গেছি তখনই বারবার এমন ছোটো হয়ে গেছি যে, সে আমাকে মেরেছে। তাই তখন আমি তাকেই উলটে ছােটাে করতে চেয়েছি। মনে মনে বলেছি, তোমার এসব কথাকে ভালো বলে মানব না, এ কেবলমাত্র ভালোমানুষ। এ তো নিজেকে দেওয়া নয়, এ অন্যের কাছে ঠকা । আমার স্বামীর বড়ো ইচ্ছা ছিল আমাকে বাইরে বের করবেন। একদিন আমি তীকে বললুম, বাইরোতে আমার দরকার কী ? তিনি বললেন, তোমাকে বাইরের দরকার থাকতে পারে । tআমি বললুম, এতদিন যদি তার চলে গিয়ে থাকে আজও চলবে, সে গলায় দড়ি দিয়ে মরবে না। মরে তো মরুক-না, সেজন্য আমি ভাবছি নে- আমি আমার জন্যে ভাবছি। সত্যি নাকি, তোমার আবার ভাবনা কিসের ? আমার স্বামী হাসিমুখে চুপ করে রইলেন। আমি তীর ধরন জানি, তাই বললুম, না, আমন চুপ করে ফাকি দিয়ে গেলে চলবে না, এ কথাটা তোমার শেষ করে যেতে হবে । তিনি বললেন, কথা কি মুখের কথাতেই শেষ হয় ? সমস্ত জীবনে কত কথা শেষ হয় না। , ना, लूशि (ईशनि ब्रांश, दला । বাইরের মধ্যে তুমি আমাকে পাও, আমি তোমাকে পাই। ঐখানে আমাদের দেনাপাওনা আছে । । কেন, ঘরের মধ্যে পাওয়ার কমতি হল কোথায় ? এখানে আমাকে দিয়ে তোমার চোখকান মুখ সমস্ত মুড়ে রাখা হয়েছে- তুমি যে কাকে চাও তাও জান না, কাকে পেয়েছ তাও জান না । al খুব জানি গো খুব জানি। মনে করছ জানি, কিন্তু জােন কি না তাও জান না । দেখো, তোমার এই কথাগুলো সইতে পারি। নে । সেইজনেই তাে বলতে চাই নি। তোমার চুপ করে থাকা আরও সইতে পারি নে। ] তাই তো আমার ইচ্ছে, আমি কথাও কইব না, চুপাও করব না, তুমি একবার বিশ্বের মাঝখানে এসে সমস্ত আপনি বুঝে নাও। এই ঘরগড় ফকির মধ্যে কেবলমাত্র ঘর করুনটুকু করে যাওয়ার জন্যে। তুমিও হও নি, আমিও হইনি। সত্যের মধ্যে আমাদের পরিচয়ু যদি পাকা হয় তবেই আমাদের