পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী ঠুকতে হয়, এত শব্দ করতে হয়, তবে একটু একটু ফুলিঙ্গ বেরোয়— সেই বিচ্ছিন্ন স্মৃলিঙ্গে কেবল अश्कान्न वाए, भूथैि बाए७ मा । আমি অনেক দিন থেকেই লক্ষ্য করেছি, সব্দীপের প্রকৃতির মধ্যে একটা লালসার স্থূলতা আছে। তার সেই মাংসবহুল আসক্তিই তাকে ধর্ম সম্বন্ধে মােহ রচনা করায় এবং দেশের কাজে দীেরাষ্মের দিকে তাড়না করে। তার প্রকৃতি স্কুল অথচ বুদ্ধি তীক্ষ বলেই সে আপনার প্রবৃত্তিকে বড়ো নাম দিয়ে সাজিয়ে তোলে। ভোগের তৃপ্তির মতোই বিদ্বেষের আশু চরিতার্থতা তার পক্ষে উগ্ররূপে দরকারি। টাকা সম্বন্ধে সন্দীপের একটা লোলুপতা আছে সে কথা বিমল এর পূর্বে আমাকে অনেকবার বলেছে। আমি যে তা বুঝি নি। তা নয়, কিন্তু সন্দীপের সঙ্গে টাকা সম্বন্ধে কৃপণতা করতে পারতুম না। ও যে আমাকে ফাকি দিচ্ছে। এ কথা মনে করতেও আমার লজ্জা হত । আমি যে ওকে টাকার সাহায্য করছি সেটা পাছে কুশ্রী হয়ে দেখা দেয় এইজন্যে ও সম্বন্ধে ওকে আমি কোনােরকম তকরার করতে চাইতুম না। আজ কিন্তু বিমলকে এ কথা বােঝানাে শক্ত হবে যে, দেশের সম্বন্ধে সন্দীপের মনের ভাবের অনেকখানিই সেই স্কুল লোলুপতার রূপান্তর। সদীপকে বিমল মনে মনে পূজা করছে; তাই আজ সন্দীপের সম্বন্ধে বিমলের কাছে কিছু বলতে আমার মন ছােটাে হয়ে যায়, কী জানি হয়তো তার মধ্যে মনের ঈর্ষা এসে বেঁধে- হয়তো অত্যুক্তি এসে পড়ে। সন্দীপের যে ছবি আমার মনে জাগছে তার রেখা হয়তো আমার বেদনার তীব্র তাপে বেঁকেচুরে গিয়েছে। তবু মনে রাখার চেয়ে লিখে ফেলা उळीं । - আমার মাস্টারমশায় চন্দ্রনাথবাবুকে আজ আমার এই জীবনের প্রায় ত্রিশ বৎসর পর্যন্ত দেখলুম ; তিনি না ভয় করেন নিন্দাকে, না ক্ষতিকে, না মৃত্যুকে । আমি যে বাড়িতে জন্মেছি। এখানে কোনো উপদেশ আমাকে রক্ষা করতে পারত না ; কিন্তু ঐ মানুষটি তীর শান্তি, তীর সত্য, তীর পবিত্র মূৰ্তিখনি নিয়ে আমার জীবনের মাঝখানটিতে র্তার জীবনের প্রতিষ্ঠা করেছেন- তাই আমি কল্যাণকে এমন সত্য করে এমন প্রত্যক্ষ করে পেয়েছি। সেই চন্দ্রনাথবাবু সেদিন আমার কাছে এসে বললেন, সন্দীপকে কি এখানে আর দরকার আছে ? কোথাও অমঙ্গলের একটু হাওয়া দিলেই তার চিত্তে গিয়ে ঘা দেয়, তিনি কেমন করে বুঝতে পারেন। সহজে তিনি চঞ্চল হন না, কিন্তু সেদিন সামনে তিনি মন্ত বিপদের একটা ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন । তিনি আমাকে কত ভালোবাসেন সে তো আমি জানি । চায়ের টেবিলে সন্দীপকে বললুম, তুমি রংপুরে যাবে না ? সেখান থেকে চিঠি পেয়েছি, তারা ভেবেছে আমিই তোমাকে জোর করে ধরে রেখেছি। বিমল চাদানি থেকে চা ঢালছিল। এক মুহুর্তে তার মুখ শুকিয়ে গেল। সে সন্দীপের মুখের দিকে একবার কটাক্ষমাত্রে চাইলে । সন্দীপ বললে, আমরা এই-যে চার দিকে ঘুরে ঘুরে স্বদেশী প্রচার করে বেড়াচ্ছি, ভেবে দেখলুম, এতে কেবল শক্তির বাজে খরচ হচ্ছে। আমার মনে হয়, এক-একটা জায়গাকে কেন্দ্র করে যদি আমরা কাজ করি তা হলে ঢের বেশি স্থায়ী কাজ হতে পারে। এই বলে বিমলের দিকে চেয়ে বললে, আপনার কি তাই মনে হয় না ? বিমল কী উত্তর দেবে প্রথমটা ভেবে পেলে না। একটু পরে বললে, দুরকমই দেশের কাজ হতে পারে। চার দিকে ঘুরে কাজ করা কিংবা এক জায়গায় বসে কাজ করা, সেটা নিজের ইচ্ছা কিংবা স্বভাব অনুসারে বেছে নিতে হবে । ওর মধ্যে যে ভাবে কাজ করা আপনার মন চায় সেইটেই আপনার পথ । সন্দীপ বললে, তবে সত্য কথা বলি। এতদিন বিশ্বাস ছিল ঘুরে ঘুরে সমস্ত দেশকে মাতিয়ে বেড়ানোই আমার কাজ। কিন্তু নিজেকে ভুল বুঝেছিলুম। ভুল বোঝবার একটা কারণ ছিল এই যে, আমার অন্তরকে সব সময়ে পূর্ণ রাখতে পারে এমন শক্তির উৎস আমি কোনো এক-জায়গায় পাইনি।