পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে 8S9) তাই কেবল দেশে দেশে নতুন নতুন লোকের মনকে উত্তেজিত করে সেই উত্তেজনা থেকেই আমাকে জীবনের তেজ সংগ্ৰহ করতে হত। আজ আপনিই আমার কাছে দেশের বাণী । এ আগুন তো আজ পর্যন্ত আমি কোনো পুরুষের মধ্যে দেখি নি। ধিক, এতদিন আপন শক্তির অভিমান করেছিলুম। দেশের নায়ক হবার গর্ব আর রাখি নে। আমি উপলক্ষ-মাত্র হয়ে আপনার এই তেজে এইখানে থেকেই সমস্ত দেশকে জ্বলিয়ে তুলতে পারব এ আমি স্পর্ধা করে বলতে পারি। না না, আপনি লজ্জা করবেন না ; মিথ্যা লজ্জা সংকোচ বিনয়ের অনেক উপরে আপনার স্থান। আপনি আমাদের মাউচকের মক্ষীরানী ; আমরা আপনাকে চারি দিকে ঘিরে কাজ করব, কিন্তু সেই কাজের শক্তি আপনারই, তাই আপনার থেকে দূরে গেলেই আমাদের কাজ কেন্দ্ৰভ্ৰষ্ট আনন্দহীন হবে। আপনি নিঃসংকোচে আমাদের পূজা গ্রহণ করুন। . লজ্জায় এবং গীেরবে বিমলের মুখ লাল হয়ে উঠল এবং চায়ের পেয়ালায় চা ঢালতে তার হাত पैा°१७ ठूलाील | চন্দ্রনাথবাবু আর-একদিন এসে বললেন, তোমরা দুজনে কিছুদিনের জন্যে একবার দাৰ্জিলিং দুঃখিত, তেল রং যে অমৰ যেন ই তােমারপর ভাল লা। ভালে দ ধ ন বিমলকে সন্ধ্যার সময় বললুম, বিমল, দাৰ্জিলিঙে বেড়াতে যাবে ? d আমি জানি দাৰ্জিলিঙে গিয়ে হিমালয় পর্বত দেখবার জন্যে বিমলের খুব শখ ছিল। সেদিন সে বললে, না, এখন থাক । দেশের ক্ষতি হবার আশঙ্কা ছিল । আমি বিশ্বাস হারাব না, আমি অপেক্ষা করব । ছোটাে জায়গা থেকে বড়ো জায়গায় যাবার মাঝখানকার রাস্তা ঝোড়ো রাস্তা ; ঘরের চতুঃসীমানায় যে ব্যবস্থটুকুর মধ্যে বিমলের জীবন বাসা বেঁধে বসে ছিল, ঘরের বাইরে এসে হঠাৎ সে ব্যবস্থায় কুলোচ্ছে না। অচেনা বাইরের সঙ্গে চেনা শুনো সম্পূর্ণ হয়ে যখন একটা বােঝাপড়া পাকা হয়ে যাবে তখন দেখব। আমার স্থান কোথায় ; যদি দেখি এই বৃহৎ জীবনের ব্যবস্থার মধ্যে কোথাও আমি আর খাপ খাই নে তা হলে বুঝব এতদিন যা নিয়ে ছিলুম সে কেবল ফাকি । সে ফাকিতে কোনো দরকার নেই। সেদিন যদি আসে তো ঝগড়া করব না, আস্তে আস্তে বিদায় হয়ে যাব। জোর-জবরদস্তি ? কিসের জন্যে ! সত্যের সঙ্গে কি জোর খাটে ! সন্দীপের আত্মকথা যেটুকু আমার ভাগে এসে পড়েছে সেইটুকুই আমার, এ কথা অক্ষামেরা বলে আর দুর্বলেরা শোনে। যা । আমি কেড়ে নিতে পারি। সেইটেই যথার্থ আমার, এই হল সমস্ত জগতের শিক্ষা । দেশে আপনা-আপনি জন্মেছি বলেই দেশ আমার নয় ; দেশকে যেদিন লুঠ করে নিয়ে জোর করে আমার করতে পারব সেইদিনই দেশ আমার হবে । লাভ করবার স্বাভাবিক অধিকার আছে বলেই লোভ করা স্বাভাবিক। কোনো কারণেই কিছু থেকে বঞ্চিত হব, প্রকৃতির মধ্যে এমন বাণী নেই। মনের দিক থেকে যেটা চাচ্ছে বাইরের দিক থেকে সেটা পেতেই হবে, প্রকৃতিতে ভিতরে বাইরে এই রফাঁটাই সত্য। এই সত্যকে যে শিক্ষা মানতে দেয় না। তাকেই আমরা বলি নীতি, এইজন্যেই নীতিকে আজ পর্যন্ত কিছুতেই মানুষ মেনে উঠতে পারছে না। যারা কাড়তে জানে না, ধরতে পারে না, একটুতেই যাদের মুঠে আলগা হয়ে যায়, পৃথিবীতে সেই আধমরা এক দল লোক আছে- নীতি সেই বেচারাদের সাত্মনা দিক । কিন্তু যারা সমস্ত মন দিয়ে